
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন ফি ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জিম চালমার্স এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ক্যাটি গ্যালাঘার এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, ভিসা আবেদন ফি ১,৬০০ ডলার থেকে ২,০০০ ডলারে বাড়ানোয় আগামী চার বছরে প্রায় ৭৬০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার রাজস্ব আসবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন ফেডারেল নির্বাচন সামনে রেখে লেবার পার্টির নীতিগত ব্যয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র PIE নিউজকে জানান, “সরকারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে প্রধান স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ভিসা আবেদন ফি ১,৬০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ ডলার করা হবে।”
সরকার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষাখাত টেকসইভাবে পরিচালনা, সমতা, মান ও সততা বজায় রাখার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারা আরও যোগ করে, “আন্তর্জাতিক শিক্ষাখাত অস্ট্রেলিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতকে টেকসইভাবে পরিচালনা করার পাশাপাশি এর সমতা, মান ও সততা নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়ান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
তবে প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো এবং তিমুর-লেস্তের প্রধান আবেদনকারীরা যাঁরা ছাড়প্রাপ্ত, তাঁদের জন্য ভিসা ফি আগের মতোই থাকবে।
রয়টার্স জানায়, লেবার পার্টি ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির সর্বোচ্চ সীমা ২,৭০,০০০ নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে, বিরোধী দল এ সীমা আরও কমিয়ে ২,৪০,০০০ করার প্রস্তাব দিয়েছে। শুধু ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় ২ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১২.১ শতাংশ বেশি।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ফি অন্যান্য প্রধান ইংরেজিভাষী শিক্ষাগন্তব্যগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বেশি। তুলনামূলকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার ফি প্রায় ১৮৫ মার্কিন ডলার এবং কানাডায় প্রায় ১৫০ কানাডিয়ান ডলার।
বিশেষ করে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনটেনসিভ কোর্সেস ফর ওভারসিজ স্টুডেন্টস (ELICOS) খাতে এই ফি বৃদ্ধির কারণে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কোর্সে ভর্তি হতে চাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এই বাড়তি খরচ দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডারদের মতে, এর ফলে ভর্তির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে আগের ফি বৃদ্ধির পর ইংরেজি ভাষা কোর্সে ভর্তির হার ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
এদিকে, অনেক ELICOS প্রতিষ্ঠানই কম ভর্তি ও বেড়ে চলা ব্যয় সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি পার্থ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব ইংলিশ (PICE) বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিচালক ভিসা-সংক্রান্ত আর্থিক চাপকেই বন্ধের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া, দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানকারী IH Sydney এবং The Language Academy-ও বন্ধ হয়ে গেছে।
ফি বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান সরকার স্টুডেন্ট ভিসা নীতিমালায় আরও কড়াকড়ি এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে আরও কঠোর ইংরেজি ভাষা দক্ষতার শর্ত এবং যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বারবার আন্তর্জাতিক শিক্ষা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে, সেগুলোকে সাময়িক স্থগিত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি।
সরকার বলছে, এসব পরিবর্তনের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার মান বজায় রাখা এবং নিশ্চিত করা যেন কেবল সত্যিকারের শিক্ষার্থীরাই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার সুযোগ পায়। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, এসব পদক্ষেপ অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাগন্তব্য হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিতে পারে।
আবির