
ছবি: সংগৃহীত
দাঁতের দাগ একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন চা, কফি, রেড ওয়াইন, ধূমপান, কিছু ঔষধ, দুর্বল মুখগহ্বর স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে দাঁতের হালকা দাগ দূর করা বা কমিয়ে আনা সম্ভব, তবে গুরুতর বা গভীর দাগের জন্য দন্ত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
এখানে কিছু ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হলো, যা ঘরে বসেই দাঁতের দাগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে:
১. বেকিং সোডা: বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাইকার্বনেট) একটি প্রাকৃতিক ঘষামাজা করার উপাদান, যা দাঁতের উপরিভাগের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
-
ব্যবহার: এক চা চামচ বেকিং সোডার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট দিয়ে সপ্তাহে ১-২ বার ২ মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করুন।
-
সতর্কতা: অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে।
২. নারিকেল তেল দিয়ে কুলকুচি (Oil Pulling): নারিকেল তেল দিয়ে কুলকুচি করার পদ্ধতিটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা থেকে এসেছে। এটি মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া কমাতে এবং দাঁতের দাগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
-
ব্যবহার: এক টেবিল চামচ ভার্জিন নারিকেল তেল মুখে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে কুলকুচি করুন (গিলে ফেলবেন না)। এরপর তেল ফেলে দিয়ে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং স্বাভাবিকভাবে ব্রাশ করুন।
-
সতর্কতা: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি করা যেতে পারে।
৩. আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের দাগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
-
ব্যবহার: এক কাপ পানিতে ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করার আগে কুলকুচি করুন।
-
সতর্কতা: এটি অ্যাসিডিক হওয়ায় দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে, তাই ব্যবহারের পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলা এবং অতিরিক্ত ব্যবহার না করা জরুরি। সপ্তাহে কয়েকবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
৪. ফল ও সবজি: কিছু ফল ও সবজি, যেমন আপেল, গাজর, সেলারি, স্ট্রবেরি, আনারস ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এগুলো চিবিয়ে খেলে লালা উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা দাঁত পরিষ্কার রাখে।
-
স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরিতে ম্যালিক অ্যাসিড থাকে, যা দাঁতের দাগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। স্ট্রবেরি চটকে বেকিং সোডার সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতে লাগাতে পারেন।
৫. লেবুর রস ও বেকিং সোডা (সাবধানে ব্যবহার করুন): লেবুর রস এবং বেকিং সোডার মিশ্রণ দাঁতের দাগ দূর করতে শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু লেবুর অ্যাসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর।
-
ব্যবহার: খুব অল্প পরিমাণে লেবুর রসের সাথে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে দ্রুত দাঁতে লাগিয়ে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ধুয়ে ফেলুন।
-
সতর্কতা: এটি খুব কদাচিৎ এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত, কারণ এর অ্যাসিডিক প্রকৃতি দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে পারে।
৬. নিয়মিত ও সঠিক ব্রাশ করা: দাঁতের দাগ প্রতিরোধ এবং হালকা দাগ দূর করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দিনে দু'বার (সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে) ২ মিনিট ধরে নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
৭. ফ্লসিং: নিয়মিত ফ্লসিং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার কণা ও প্লাক দূর করে, যা দাগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
-
দাগ সৃষ্টিকারী খাবার ও পানীয় সীমিত করুন: চা, কফি, রেড ওয়াইন, কালো পানীয় এবং ধূমপান কমিয়ে দিন বা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন। এসব পানীয় পানের পর সম্ভব হলে পানি দিয়ে মুখ কুলকুচি করুন।
-
দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি দাগ খুব বেশি বা গভীর হয়, অথবা ঘরোয়া উপায়ে কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে একজন দন্ত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। তারা প্রফেশনাল ক্লিনিং, ব্লিচিং বা অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কার্যকরভাবে দাঁতের দাগ দূর করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো সবার জন্য একই রকম কার্যকর নাও হতে পারে। দাঁতের এনামেলের ক্ষতি এড়াতে যেকোনো নতুন পদ্ধতি ব্যবহারের আগে সতর্ক থাকুন।
সাব্বির