ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

 ইরানের সেই ভয়াবহ কারাগার যেখানে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে নির্যাতন করা হয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৪ জুলাই ২০২৫

 ইরানের সেই ভয়াবহ কারাগার যেখানে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে নির্যাতন করা হয়

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আগে, শাহ রেজা পাহলভির শাসনামলে যে কারাগারে বন্দীদের নির্যাতন করা হত, সেটিই বর্তমানে ইব্রাত মিউজিয়াম নামে পরিচিত। এই জেলখানায় আট মাস ধরে বন্দি ছিলেন ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এখানেই তিনি সহ্য করেছেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। এই কারাগারের ভয়াবহ ইতিহাস এখন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত, যেখানে দেখা যায় সেই দুঃসহ অতীতের দলিল।

১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে ইসলামি বিপ্লবের অংশ হিসেবে বারবার গ্রেফতার হন খামেনি। তিনি কোয়েম ও মাশহাদের বিভিন্ন মসজিদে কোরআন, ইসলামি চিন্তাধারা ও ‘নাহজুল বালাগাহ’-র ওপর বক্তব্য দিতেন। এসব বক্তৃতা SAVAK (ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনামলে পরিচালিত গোপন পুলিশ, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা)-এর নজরে আসে, এবং ১৯৭৫ সালে মাশহাদে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বই, নোটস জব্দ করে তাঁকে পাঠানো হয় “জয়েন্ট পুলিশ-SAVAK কারাগারে”, যা আজ ইব্রাত মিউজিয়াম। তিনি বলেন, “এই বন্দিত্ব ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়, নির্যাতন ছিল অমানবিক।”

মিউজিয়ামে খামেনির একটি মোমের মূর্তি রয়েছে, যেখানে তিনি পরেছেন কালো পাগড়ি, গোল ফ্রেমের চশমা ও বাদামি আলখাল্লা। এই মূর্তির পেছনের সেলে তিনি এক সময় বন্দি ছিলেন—ছোট জানালায় লোহার গ্রিল, আধো অন্ধকারে ঢাকা। ছবির নিচে লেখা: “আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি”।

শুধু পুরুষ নয়, বহু ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী এই জেলে বন্দি হয়েছিলেন শুধুমাত্র হিজাব পরার কারণে। তখন হিজাবকে অপরাধ হিসেবে দেখা হতো। 

১৯৩২ সালে রেজা শাহ পাহলভির আমলে জার্মান ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা নির্মিত হয় ইরানের প্রথম আধুনিক এই কারাগার। ১৯৪৭ সালে এটি প্রথম নারীদের জন্য কারাগারে রূপান্তরিত হয়। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিচয় আসে ৬০-৭০ দশকে, যখন এখানে ইসলামি বিপ্লবের কর্মীদের বন্দি ও নির্যাতন করা হতো। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর এটি তোহিদ কারাগারে রূপ নেয় এবং ২০০০ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের পর বন্ধ হয়ে যায়। ২০০২ সালে এটিকে একটি সংগ্রহশালায় রূপান্তর করে ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কর্তৃপক্ষ।

চতুর্থ তলা এই কারাগার ভূমিকম্প প্রতিরোধী এবং পালানোর সব পথ নষ্ট করে তৈরি করা হয়েছে। মধ্যভাগে একটি গোলাকৃতি খোলা চত্বর, যেখান থেকে সব করিডোর সংযুক্ত। দেয়ালে শব্দ প্রতিধ্বনি না হওয়ায় বন্দিদের মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেত।

প্রদর্শনীর ভয়াবহতা: মোমের পুতুল, রক্তাক্ত নির্যাতনের দৃশ্য
মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে রয়েছে—

  • মোমের পুতুলের মাধ্যমে নির্যাতনের দৃশ্য
  • রক্তমাখা জামাকাপড়
  • সাবেক বন্দিদের ভিডিও সাক্ষাৎকার
  • পুরনো নথি, ছবি, বন্দিদের রক্ষিত দ্রব্য
  • SAVAK ও পাহলভি রাজবংশের ছবি

কিছু প্রদর্শনী এতটাই বেদনাদায়ক যে সংবেদনশীল দর্শকদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়।

ভ্রমণকারীদের জন্য পরিদর্শন নির্দেশিকা

ইব্রাত মিউজিয়াম ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গভীর অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যেখানে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে ওঠে। এটি তেহরানের ইমাম খোমেইনি স্কয়ার সংলগ্ন ইয়ারজানি স্ট্রিটে অবস্থিত। মিউজিয়ামটি প্রতিদিন খোলা থাকে এবং দর্শনার্থীদের জন্য ইংরেজি ভাষায় গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে অনেক সময় সাবেক বন্দিরাও গাইড হিসেবে তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।

এখানে রয়েছে একটি ভিডিও প্রদর্শনী, যেখানে সাবটাইটেলসহ প্রামাণ্যচিত্র ও সাবেক বন্দিদের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়। এই অভিজ্ঞতাটি আরও জীবন্ত করে তোলে সেই সময়কার বাস্তবতা। মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্য টিকিট প্রয়োজন এবং সংবেদনশীল দর্শকদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ প্রদর্শনীগুলো অত্যন্ত আবেগময় ও মর্মস্পর্শী।

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×