
ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার ফ্রানচেস্কা আলবানিজ বিশ্বের সব দেশকে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “ইসরায়েল একটি গণহত্যার অর্থনীতি গড়ে তুলেছে, যেখানে কোম্পানিগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুনাফায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।”
তিনি এই মন্তব্য করেন জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তাঁর নতুন প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে। প্রতিবেদনে ৬০টির বেশি কোম্পানির নাম উঠে এসেছে যারা “ইসরায়েলের বসতি উপনিবেশবাদ এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ” চালিয়ে নিতে সহায়তা করছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আলবানিজ তাঁর ভাষণে বলেন, “অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পরিস্থিতি আজ ভয়াবহ। ইসরায়েল ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য দায়ী।” তিনি জানান, ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, হাসপাতাল, স্কুল ধ্বংস করা হয়েছে এবং গাজার ৮৫ শতাংশ অঞ্চল এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
‘From Economy of Occupation to Economy of Genocide’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আলবানিজ দেখিয়েছেন কীভাবে কর্পোরেট জগৎ ইসরায়েলের অবৈধ দখল, নজরদারি ও ধ্বংসযজ্ঞকে টিকিয়ে রাখছে।
এখানে নাম রয়েছে অস্ত্র প্রস্তুতকারক, প্রযুক্তি জায়ান্ট, ভারী যন্ত্রপাতি কোম্পানি ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের—যারা অবৈধ বসতি গড়ে তোলা থেকে শুরু করে নজরদারি ও সামরিক হত্যাযজ্ঞ পর্যন্ত সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, “অনেক কোম্পানি ও ব্যক্তি গাজা ও অধিকৃত ভূখণ্ডে সহিংসতা, ধ্বংস, ও হত্যাযজ্ঞ থেকে লাভ করেছে।”
বিশেষত ইসরায়েলের সামরিক খাতকে তিনি বলেছেন “রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড।”
F-35 যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ড্রোন ও AI-নির্ভর লক্ষ্যভেদ প্রযুক্তি ইসরায়েল গাজায় পরীক্ষা করে। এতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের Lockheed Martin, ইটালির Leonardo SpA, ইসরায়েলের Elbit Systems ও IAI, জাপানের FANUC Corporation প্রমুখ।
Microsoft, Amazon, Alphabet, IBM, Palantir Technologies — এরা ইসরায়েলের নজরদারি ও বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় অংশীদার।
Booking.com ও Airbnb-র মতো কোম্পানি অবৈধ বসতিতে হোটেল ও বাড়ির তালিকা প্রকাশ করে সেটাকে বৈধতা দেয়।
আলবানিজ উল্লেখ করেন, গত ২১ মাসে ইসরায়েলি স্টক মার্কেট ২০০% বেড়েছে এবং $২২০ বিলিয়নের বেশি লাভ করেছে — আর ফিলিস্তিনিরা গুম, খুন ও ধ্বংসের শিকার। তিনি বলেন, “স্পষ্টতই, কারও কারও কাছে গণহত্যা একটি লাভজনক ব্যবসা।”
প্রতিবেদনে সব রাষ্ট্র ও কোম্পানির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা এই অবৈধ অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করে। তিনি জানান, প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ৪৮টি কোম্পানিকে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, কিন্তু মাত্র ১৮টি জবাব দেয় এবং অল্প কিছু “সততা”র সঙ্গে উত্তর দেয়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই রিপোর্টকে “আইনি ভিত্তিহীন, মানহানিকর এবং UN অফিসের অপব্যবহার” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
ইসরায়েল এর আগে এই রিপোর্টারকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে মানবাধিকার কাউন্সিল বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল।
মুমু ২