
ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় ব্যায়াম করা একদম বাধ্যতামূলক—এ কথা নিশ্চয়ই আপনি আগেও শুনেছেন। কিন্তু একটি বিষয় অনেকেই বলেন না—কোন সময় ব্যায়াম করলে সবচেয়ে ভালো ফল মেলে? সকালে না খালি পেটে, দুপুরের খাবারের পরে একটু হাঁটা, নাকি রাতে জিমে যাওয়া? গবেষণা বলছে, ব্যায়ামের সময় নির্বাচন করাও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সকালের ব্যায়াম: সবসময় সেরা নাও হতে পারে
সকালে উঠে হালকা ব্যায়াম করতে অনেকে পছন্দ করেন। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিছু মানুষের ক্ষেত্রে খালি পেটে সকালের তীব্র ব্যায়াম (যেমন দৌড় বা HIIT) রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
এর কারণ হলো "ডন ফেনোমেনন"—সকালে শরীর নিজে থেকেই কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায়। এর সাথে ভারী ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে।
তবে হালকা হাঁটা, যোগ ব্যায়াম বা লাইট স্ট্রেংথ ট্রেনিং সকালে করাটা এখনও নিরাপদ এবং উপকারী হতে পারে—বিশেষ করে যদি আপনি কিছু খেয়ে নেন বা গ্লুকোজ মনিটর করেন।
খাবার পর হাঁটা: সবচেয়ে কার্যকর ‘সাধারণ’ উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবার খাবার পরে ১৫-২০ মিনিট হেঁটে নেওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর কৌশল।
একটি ২০২২ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের ২–৫ মিনিটের মধ্যে হাঁটলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার বৃদ্ধি অনেকটাই কমে যায়। হাঁটার ফলে গ্লুকোজ সরাসরি পেশীতে গিয়ে শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এটি হজমের উন্নতি করে এবং খাবারের পর ক্লান্তি ও অলসতা কমায়।
দুপুর–বিকেলের ব্যায়াম: ইনসুলিন সেনসিটিভিটির জন্য উপযুক্ত সময়
যারা স্ট্রাকচারড ব্যায়াম করেন (যেমন জিম, সাইক্লিং, ওজন উত্তোলন), বিকেল হতে পারে আদর্শ সময়। এই সময় শরীর সবচেয়ে বেশি ইনসুলিন সেনসিটিভ থাকে, অর্থাৎ পেশি তখন সহজে গ্লুকোজ গ্রহণ করে।
একটি ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিকেলে ব্যায়াম করতেন, তারা সকালের তুলনায় ভালো গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সফল ছিলেন—even একই রকম ব্যায়াম করলেও।
রাতের ব্যায়াম: সম্ভব, তবে সতর্ক থাকুন
রাতে ৭ বা ৮টার পর সময় বের করলেই চলবে। রাতের ব্যায়াম রক্তে শর্করা কমাতে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে যদি আপনি ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ (যেমন sulfonylureas) নেন, তবে খুব রাতে ব্যায়াম করলে নাইটটাইম হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রাতে রক্তে শর্করা বিপজ্জনকভাবে কমে যাওয়া) হতে পারে।
এইজন্য অনেকেই রাতে ব্যায়াম করলে মাঝরাতে এলার্ম দিয়ে গ্লুকোজ চেক করেন।
ফাস্টিং ব্যায়াম: না খেয়ে ব্যায়াম নিরাপদ তো?
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এখন জনপ্রিয়, এবং অনেকে এটিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনে করেন। তবে খালি পেটে ব্যায়াম করলে সতর্ক থাকা জরুরি। হালকা ব্যায়াম (যেমন হেঁটে যাওয়া বা স্ট্রেচিং) করলে সমস্যা হয় না, তবে ইনসুলিন বা গ্লুকোজ-নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধের ক্ষেত্রে বিপদ হতে পারে।
একটি হালকা স্ন্যাকস (যেমন কলা বা বাদাম) খেয়ে নিলে নিরাপদ থাকা যায়।
তবে সেরা সময় কোনটা?
ডায়াবেটিসে সবচেয়ে ভালো ব্যায়ামের সময় হলো—যে সময় আপনি নিয়মিত এবং নিরাপদভাবে করতে পারেন। তবে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সাধারণ গাইডলাইন হতে পারে:
-
সকাল (খালি পেটে): ধীরে শুরু করুন। ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
-
খাবারের পর: সবচেয়ে কার্যকর। ১৫–৩০ মিনিট হাঁটা যথেষ্ট।
-
বিকেল: ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেশি, পারফরম্যান্সের জন্য ভালো সময়।
-
রাত: হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোধে শোয়ার ১.৫ ঘণ্টা আগে শেষ করুন।
আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝতে CGM (continuous glucose monitor) বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করুন।
সময় নয়, নিয়মিততা সবচেয়ে জরুরি
দিন শেষে, ঘড়ি নয়—নিয়মিত চলাফেরা করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম HbA1c কমাতে, মেজাজ ভালো রাখতে, ইনসুলিন প্রতিরোধ কমাতে এবং জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
দিনে যদি শুধু ১০ মিনিট হাঁটতেও পারেন, তাও গুরত্বপূর্ণ। তাই সময় বেছে নিন আপনার জীবনের সঙ্গে মানানসইভাবে—আপনার অগ্ন্যাশয় (pancreas) কৃতজ্ঞ থাকবে!
Jahan