
ছবি: সংগৃহীত
হাত ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন আর্থ্রাইটিস (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস), আঘাত, প্রদাহ, অতিরিক্ত ব্যবহার, গেঁটে বাত (gout), ফাইব্রোমায়ালজিয়া বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা। ব্যথার কারণ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে, সাময়িক স্বস্তি এবং ব্যথা ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
করণীয়:
১. বিশ্রাম: ব্যথা অনুভব হলে সংশ্লিষ্ট জয়েন্টকে বিশ্রাম দিন। অতিরিক্ত নড়াচড়া বা চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, যা প্রদাহ বাড়াতে পারে।
২. ঠান্ডা বা গরম সেঁক:
-
ঠান্ডা সেঁক: নতুন ব্যথা বা ফোলাভাব থাকলে বরফ প্যাক (একটি পাতলা কাপড়ে মোড়ানো) ১০-১৫ মিনিটের জন্য দিনে কয়েকবার ব্যবহার করুন। এটি প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
-
গরম সেঁক: পুরনো ব্যথা বা পেশী শক্ত হয়ে গেলে গরম পানির সেঁক বা উষ্ণ গোসল উপকারী হতে পারে। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৩. ব্যথানাশক ঔষধ (ওভার-দ্য-কাউন্টার):
-
ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ন্যাপ্রোক্সেন (Naproxen) বা অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen) এর মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ঔষধ সাময়িক ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। ব্যবহারের আগে অবশ্যই নির্দেশনা পড়ুন বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিন।
৪. হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং: ব্যথা কমে আসার পর জয়েন্টের নমনীয়তা এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ব্যথাবর্ধক কোনো ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন। ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শে সঠিক ব্যায়াম পদ্ধতি অনুসরণ করা ভালো।
৫. সঠিক জুতা: পায়ের জয়েন্টের ব্যথার ক্ষেত্রে আরামদায়ক, সঠিক মাপের এবং ভালো সাপোর্টযুক্ত জুতা পরা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ হিলযুক্ত জুতা বা শক্ত সোলের জুতা পরিহার করুন।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন শরীরের জয়েন্টগুলোতে, বিশেষ করে হাঁটু ও পায়ের জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে ব্যথা বাড়াতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে জয়েন্টের উপর চাপ কমে আসে।
৭. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার: কিছু খাবার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যেমন: হলুদ, আদা, রসুন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ (স্যামন, টুনা), সবুজ শাক-সবজি, বেরি ফল ইত্যাদি। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।
৮. পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের মেরামতের প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে এবং ব্যথা ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৯. আর্দ্রতা বজায় রাখা: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা প্রয়োজন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি জয়েন্টের ব্যথা নিচের লক্ষণগুলোর সাথে দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
-
ব্যথা তীব্র হয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয়।
-
জয়েন্ট ফুলে যায়, লাল হয় বা উষ্ণ অনুভব হয়।
-
ব্যথার সাথে জ্বর বা শরীরের অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়।
-
ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার ফিরে আসে।
-
জয়েন্ট স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে না পারা।
-
আঘাতের পর তীব্র ব্যথা।
গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র সাধারণ পরামর্শ। আমি একজন স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তা, কোনো স্বাস্থ্য পেশাদার নই এবং আমি চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারি না। আপনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে যেকোনো উদ্বেগের জন্য সর্বদা একজন যোগ্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
সাব্বির