
গৃহহীন বিধবা মমেনা বেগম। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অন্যের বাড়িতে ঠাঁই নিয়ে জীবন কাটানো এই নারী কিছুদিন আগেও জানতেন না ‘নিজস্ব ছাদের নিচে’ ঘুমানোর স্বাদ কেমন। জনকণ্ঠে প্রকাশিত মানবিক প্রতিবেদন তার জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছিল। পেয়েছিলেন গুচ্ছগ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই ঘরটিও শেষমেশ হারাতে হলো পুরনো মালিকের দখলদারির কারণে।
গত ১ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলের সরাসরি উদ্যোগে মমেনা বেগমকে গোমড়া গুচ্ছগ্রামের ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত একটি সরকারি ঘরে আশ্রয় দেয়া হয়। কিন্তু ঘর বরাদ্দের পরদিনই আগের বরাদ্দপ্রাপ্ত জাহেরা বেগম ও তার লোকজন ঘরে এসে জোরপূর্বক মমেনাকে বের করে দেয়। তখন স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ফের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারান এই নিঃস্ব নারী।
আবারও অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানো শুরু করেছেন মমেনা বেগম। একবুক হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, “একদিনের জন্য মনে হয়েছিল, এবার বুঝি শান্তিতে মরতে পারবো। কিন্তু পরদিন আবার ঘরছাড়া। আমার কপালে কি ঘর জুটবে না কোনোদিন?”
প্রশাসনিক নির্দেশ অমান্য করে জাহেরা বেগমের দখলে থাকা ঘরটি পুনরায় নিজের করে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি শুধু একজন গৃহহীন নারীর দুর্ভাগ্য নয়, বরং এটি একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার করুণ প্রতিচ্ছবি।
স্থানীয় এক সমাজকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরাসরি নির্দেশ থাকার পরও কেউ যদি সেই আদেশ অমান্য করে গৃহহীন মানুষকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ কাকে ভরসা করবে?”
এ বিষয়ে পুনরায় জনকণ্ঠ প্রতিনিধি জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রভাবশালী কুচক্রী মহল এই ঘটনায় পরোক্ষ মদত দিয়ে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলছে এবং জাহেরা বেগমের পক্ষাবলম্বন করে প্রশাসনের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
অথচ ২০১২ সালে নির্মিত গুচ্ছগ্রামের বেশ কয়েকটি ঘর দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই ঘরগুলো বরাদ্দ নিয়ে কেউ সেগুলো বিক্রি করেছেন, আবার কেউ আত্মীয়-স্বজনকে বসবাস করিয়েছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ ঘটনায় গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য নির্ধারিত গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও মানবিকতার প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এসেছে।
আঁখি