
ছবি: সংগৃহীত।
দেহের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ‘ফিল্টার’ হিসেবে কাজ করে কিডনি। এই ছোট দুটি অঙ্গ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য নিষ্কাশন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে তরল উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং লাল রক্তকণিকার উৎপাদনে সহায়তা করতে। কিন্তু যতক্ষণ না কোনো বড় সমস্যা হয়—যেমন কিডনি স্টোন বা কিডনি ফেইলিউর—ততক্ষণ আমরা এই অঙ্গদুটিকে খুব একটা গুরুত্ব দিই না।
কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস কিডনির স্বাস্থ্যের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। কিছু খাবার কিডনিকে সুরক্ষা দেয়, আবার কিছু খাবার গোপনে কিডনির ক্ষতি করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক—কোন ৭টি খাবার কিডনির জন্য উপকারী এবং কোন ৫টি খাদ্য গোপনে কিডনির ক্ষতি করছে।
যে ৭টি খাবার কিডনির জন্য উপকারী:
১. ফুলকপি:
ফাইবার, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর ফুলকপি কিডনির জন্য আদর্শ। এটি পটাশিয়াম ও অক্সালেট কম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য নিরাপদ। ফুলকপি দিয়ে স্বাস্থ্যকর রাইস বা ম্যাশড পটেটোর বিকল্প তৈরি করা যায়।
২. ব্লুবেরি:
সোডিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম কম থাকা এই ফল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা কিডনির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। স্মুদি বা হালকা নাস্তা হিসেবে খাওয়া উপকারী।
৩. রসুন:
রসুন কেবল খাবারে স্বাদই বাড়ায় না, এটি উচ্চ রক্তচাপ ও প্রদাহ কমায় এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে কোনো সোডিয়াম না থাকায় এটি লবণের বিকল্প হিসেবেও আদর্শ।
৪. আপেল:
পেকটিন সমৃদ্ধ আপেল রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কিডনির জন্য উপকারী। আপেলে পটাশিয়াম কম, যা কিডনি স্টোন প্রতিরোধে সহায়ক।
৫. বাঁধাকপি:
সুলভ মূল্যের এই সবজি ভিটামিন কে, সি এবং বি৬-এ ভরপুর। এতে ফসফরাস ও পটাশিয়াম কম থাকে, যা কিডনির জন্য নিরাপদ। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ফ্রি রেডিক্যাল দূর করে।
৬. লাল বেল পিপার (রেড বেল পেপার):
কম পটাশিয়াম এবং উচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই সবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। খাবারে রঙ, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বাড়াতে এটি আদর্শ।
৭. ডিমের সাদা অংশ:
ডিমের কুসুমে ফসফরাস বেশি থাকলেও সাদা অংশ কিডনির জন্য নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। এটি শরীরকে শক্তি জোগায় এবং পেশি গঠনে সহায়তা করে।
যে ৫টি খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর:
১. প্রক্রিয়াজাত মাংস (প্রসেসড মিট):
হটডগ, বেকন, ডেলি মিটের মতো মাংসে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম ও সংরক্ষণকারী রাসায়নিক থাকে, যা কিডনির রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
২. গাঢ় রঙের সোডা:
কোলা জাতীয় পানীয়তে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড সহজেই শরীরে শোষিত হয়, যা কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে এবং ক্যালসিয়াম জমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. অ্যাভোকাডো:
অ্যাভোকাডো পুষ্টিকর হলেও এতে প্রায় ৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
৪. ক্যানজাত স্যুপ ও ইনস্ট্যান্ট নুডলস:
এই খাবারগুলোতে প্রতি পরিমাণে ৮০০–১২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত সোডিয়াম থাকে, যা কিডনির রক্তচাপ ও তরল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করে।
৫. পালং শাক:
পালং শাকে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট থাকে, যা ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিডনি স্টোন তৈরিতে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খেলে ঝুঁকি বাড়ে।
আমরা অনেকেই কিডনি নিয়ে ভাবি না যতক্ষণ না গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। অথচ প্রতিদিন সঠিক খাবার নির্বাচন করে এই অঙ্গ দুটির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা সম্ভব। লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দিয়ে, ফল, শাকসবজি ও হাইড্রেটেড থাকা—এগুলোই কিডনি সচেতনতার প্রথম ধাপ।
এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদান ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রকাশিত। এটি চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। কিডনি রোগ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অবশ্যই যোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ নিন।
মিরাজ খান