ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

গ্রামে গ্রামে ডেঙ্গুর দাপট: বাড়ছে শঙ্কা ও মৃত্যু

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ৩ জুলাই ২০২৫

গ্রামে গ্রামে ডেঙ্গুর দাপট: বাড়ছে শঙ্কা ও মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

দেশে ডেঙ্গু এখন আর শুধু শহুরে রোগ নয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে এর ভয়াবহ বিস্তার গ্রামীণ জনপদে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়ে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনো ঢাকা ও কিছু নগর এলাকায় সীমাবদ্ধ। ফলে একদিকে কিছু কিছু শহরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও গ্রামে আক্রান্তের হার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালেও দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল প্রায় পুরোপুরি ঢাকাকেন্দ্রিক। ওই বছর আক্রান্ত রোগীর ৮৩.০৭ শতাংশই ছিলেন রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু ২০২২ সালে চিত্র বদলাতে শুরু করে। ওই বছর ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২.৮৭ শতাংশে, আর ঢাকার বাইরে রোগী বেড়ে হয় ৩৭.১৩ শতাংশ।

বিস্ময়করভাবে ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাইরে রোগীর সংখ্যা ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়। সেই বছর ঢাকায় ছিল ৩৩.৮৫ শতাংশ রোগী, বিপরীতে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ৬৬.১৫ শতাংশ। এমন পরিবর্তন স্পষ্ট করে দেয় যে ডেঙ্গু এখন গ্রাম-গঞ্জেও সমান আতঙ্কের নাম।

২০২৫ সালেও ডেঙ্গুর দাপট থেমে নেই। চলমান বর্ষায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ২ জুলাই (বুধবার) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১৬ জন।

বিভাগওয়ারি হিসাব বলছে, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৬৫ জন, চট্টগ্রামে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৩ জন, ঢাকার বাইরের অংশে ৫৫ জন এবং রাজশাহীতে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন ভর্তি হয়েছেন। অপরদিকে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যথাক্রমে ২৯ ও ৬৫ জন ভর্তি হয়েছেন। খুলনা ও ময়মনসিংহেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাটি শহরের বাইরে বেশি।

২০২৩ সাল ছিল দেশের জন্য ডেঙ্গু মহামারির দিক থেকে এক বিভীষিকাময় বছর। ওই বছর ডেঙ্গুতে মারা যান ১,৭০৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৩,২১,১৭৯ জন। ২০২৪ সালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি আশানুরূপভাবে—সেবার ৫৭৫ জন মারা যান এবং আক্রান্ত হন ১,০১,২১৪ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ডেঙ্গু প্রতিরোধ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম এখনো মূলত নগরকেন্দ্রিক। ঢাকার সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে যে পরিমাণ নজরদারি, ওষুধ ছিটানো বা জনসচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়, তা দেশের গ্রামীণ উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে নেই বললেই চলে। অথচ সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, এখন ডেঙ্গুর মূল আক্রমণ চলছে সেই গ্রামীণ এলাকাগুলোতেই।

পরিসংখ্যান আর বাস্তব অভিজ্ঞতা মিলিয়ে স্পষ্ট—ডেঙ্গু আজ আর শহরের সীমায় আটকে নেই। গ্রামীণ জনপদে এর ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে। অথচ নজরদারি, ওষুধ প্রয়োগ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনো মূলত ঢাকাকেন্দ্রিকই রয়ে গেছে। সময় এসেছে গ্রামকেন্দ্রিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের। নইলে আগামী দিনে ডেঙ্গু শুধু স্বাস্থ্য নয়, গ্রামীণ জনজীবনের জন্যও এক দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় হয়ে উঠবে।

ফারুক

×