
অনেকেই ভাবেন, ইসিজি (ECG) পরীক্ষাই হার্ট অ্যাটাক শনাক্তের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে, ইসিজি সবসময় হার্ট অ্যাটাক ধরতে পারে না—বিশেষ করে শুরুতেই অথবা নির্দিষ্ট কিছু ধরনের অ্যাটাকের ক্ষেত্রে। একাধিক সময় এমনও দেখা গেছে, একজন রোগী ক্লিনিকে গিয়ে ইসিজি করিয়েছেন, রিপোর্ট ‘নরমাল’ এসেছে, কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার লক্ষণগুলো আরও খারাপ হয়েছে এবং পরে নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক হিসেবে ধরা পড়েছে।
কেন ইসিজি হার্ট অ্যাটাক মিস করতে পারে?
সময়কাল গুরুত্বপূর্ণ: হার্ট অ্যাটাকের একেবারে শুরুর দিকে যদি ইসিজি করা হয়, তখন হৃদপিণ্ডে বড় ধরনের ক্ষতি না হলে রিপোর্টে পরিবর্তন নাও দেখা যেতে পারে। এই সময় ইসিজিতে কোনো অস্বাভাবিকতা না থাকলেও, হার্টে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের ধরন: সব হার্ট অ্যাটাকে ইসিজিতে স্পষ্ট পরিবর্তন আসে না। বিশেষ করে নীরব হার্ট অ্যাটাক (Silent Heart Attack)-এ তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে এবং ইসিজিতেও সেগুলোর ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম। এই ধরনের সন্দেহজনক ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণ থাকলে তাকে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং ক্রমাগত একাধিক ইসিজি করা হয়।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কোন কোন পরীক্ষা করা হয়?
ট্রোপোনিন পরীক্ষা (Troponin Test): হৃদপিণ্ডে ক্ষতি হলে রক্তে ট্রোপোনিন নামক প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তবে এই প্রোটিনের মাত্রা বাড়তে কিছুটা সময় লাগে, তাই শুধু একবার পরীক্ষা করলেই তা যথেষ্ট নয়। ৯০ মিনিট পর আবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া হয়।
আলট্রাসাউন্ড ও কোরোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি: হার্টের গঠন ও কার্যক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়। আর ধমনীতে কোনো ব্লক রয়েছে কিনা তা জানতে কোরোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করা হয়, যা একটি ইনভেসিভ পরীক্ষা।
প্রতিরোধমূলক পরীক্ষা ও নজরদারি
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে ২৫ বছর বয়স থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও স্থূলতা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পারিবারিক জেনেটিক রোগ—যেমন Familial Hypercholesterolemia—থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
Lipoprotein(a) এর উচ্চ মাত্রাও ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এক্সটেন্ডেড লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে সেগুলোর পরিমাণ জানা জরুরি।
এলডিএল ৫০ mg/dL-এর নিচে রাখা উচিত, আর পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ৩০ mg/dL-এর মধ্যে রাখা ভালো।
ট্রাইগ্লিসারাইড বা রক্তে চর্বির পরিমাণ কম রাখাও জরুরি।
ক্যালসিয়াম স্কোর টেস্ট করুন
একটি সাধারণ সিটিস্ক্যানের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম স্কোর টেস্ট করা হয়। এটি কোনো ইনজেকশন বা রং ব্যবহারের প্রয়োজন ছাড়াই হৃদপিণ্ডে প্ল্যাক জমা হয়েছে কি না, তা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। স্কোর বেশি হলে তাৎক্ষণিক হার্ট অ্যাটাকের নিশ্চয়তা না দিলেও, ভবিষ্যতে ঝুঁকি কতটা রয়েছে তা জানিয়ে দেয়। এতে আগেভাগেই ওষুধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিকার শুরু করা যায়।
হার্ট অ্যাটাক শুধু ইসিজি রিপোর্টে নির্ভর করে নিশ্চিত করা ঠিক নয়। সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন এবং প্রয়োজনে একাধিক পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হোন। স্বাস্থ্য সচেতনতা আর আগাম সতর্কতাই পারে আপনার জীবন বাঁচাতে।
রিফাত