ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

স্মৃতির পর্দায় এক অমর জুটি: সালমান শাহ ও শাবনুর

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৭ জুলাই ২০২৫

স্মৃতির পর্দায় এক অমর জুটি: সালমান শাহ ও শাবনুর

ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার বিকেল মানেই ছিল এক অন্যরকম আনন্দ। গ্রাম কিংবা মফস্বল শহরের মানুষ বিকেলের পরপরই ভিড় জমাত ছোট্ট একটা সাদা-কালো টেলিভিশনের সামনে। ঘড়ির কাটা ঠিক তিনটা ছুঁতেই যে যেভাবে পারত বসে পড়ত—শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই। কারণ তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেখা যেত বাংলা ছায়াছবি। কিন্তু মানুষ শুধু সিনেমা দেখতো না, অপেক্ষা করত একটি জাদুকরী জুটির জন্য—সালমান শাহ ও শাবনুর।

তাদের একসাথে পর্দায় দেখা মানেই ছিল আবেগের বিস্ফোরণ। সালমান শাহ—চুলে ব্যাকব্রাশ, চোখে গগলস, শহুরে স্টাইলের ঝলক। শাবনুর—নাটকীয় চোখ, প্রাণবন্ত হাসি, এক্সপ্রেশনের জাদুতে মোহিত করে তুলতেন দর্শককে। একসাথে পর্দায় এলে যেন আগুন লাগিয়ে দিতেন পর্দায়, মানুষের হৃদয়ে।

১৯৯৪ সালে ‘তুমি আমার’ ছবিতে প্রথমবার একসাথে পর্দায় আসেন সালমান-শাবনুর। কে জানতো তখন, শুরু হচ্ছে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটির পথচলা। মাত্র চার বছরে একসাথে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন তারা। আর আশ্চর্যের বিষয়, প্রায় প্রতিটি ছবিই হয় সুপারহিট।

“তুমি আমার স্বপ্নের ঠিকানা”, “আনন্দ অশ্রু”, “সাথী তুমি”, “ভালো আছি ভালো থেকো”—
প্রতিটি ছবির নাম যেন এক একটি জীবন্ত স্মৃতি।

তাদের জুটিকে অনেকে শুধু রোমান্টিক ছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করলেও ১৪টি ছবির মধ্যে “বিক্ষোভ” ছিল ব্যতিক্রম, যেখানে ছাত্র রাজনীতি ও অ্যাকশনধর্মী গল্প তুলে ধরা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ঈদে মুক্তি পাওয়া “স্বপ্নের ঠিকানা” ছবিটি শুরুতে ঢাকার বড় কোন হলে জায়গা না পেলেও মফস্বলে এক সপ্তাহেই বাজিমাত করে, পরে ঢাকার বড় হলগুলোতে জায়গা করে নেয়। তাদের সিনেমার গানগুলো ছিল আরেক রকম আবেগের নাম—“আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো”, “তুমি মোর জীবনের ভাবনা”, কিংবা “ভালো আছি ভালো থেকো”— গানগুলো আজও হৃদয়ে বাজে।

তাদের ছবি ছিল গ্রামের মেলার মূল পোস্টার, তরুণেরা জমাতো ভিউ কার্ড। এই জুটিকে একসাথে দেখতে হলে হলে লাইন লেগে যেত। তারা হয়ে উঠেছিলেন এক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে ভালোবাসার নাম।

কিন্তু ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সব কিছুর মাঝে নেমে আসে এক বিষাদের ছায়া। মাত্র ২৫ বছর বয়সে সালমান শাহের অকাল প্রয়াণে থেমে যায় এই জুটির পথচলা। পর্দার বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাবনুর, আর দর্শকদের মনে সেটা ছিল আত্মীয় হারানোর মতো এক শোক।

আজো ইউটিউবের কমেন্ট সেকশন সাক্ষ্য দেয়—“ইশ সালমান যদি বেঁচে থাকতেন!”
কারণ সালমান-শাবনুর শুধু এক সময়ের প্রেম ছিল না, তারা হয়ে উঠেছে আজকের সময়ের চিরন্তন নস্টালজিয়া।

তারা ছিলেন এক রঙিন স্বপ্নের নাম—
আর সত্যিই তো, স্বপ্নেরা কখনো মরে যায় না।

 

শেখ ফরিদ 

×