
ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের যুগান্তকারী এক পদ্ধতিতে ব্রিটেনে আটটি সুস্থ শিশু জন্ম নিয়েছে, যেখানে মায়ের ডিএনএ ছাড়াও এক দাতা নারীর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ব্যবহার করা হয়েছে। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে জিনঘটিত বিরল ও প্রাণঘাতী রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
সাধারণত, আমাদের বেশিরভাগ ডিএনএ সেল-এর নিউক্লিয়াসে থাকে, যা মায়ের ও বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আসে। তবে সেলের বাইরের মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অংশেও কিছু ডিএনএ থাকে। এই মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-তে ত্রুটি থাকলে শিশুর মধ্যে মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে, যেমন পেশির দুর্বলতা, খিঁচুনি, মানসিক বিকাশে বিলম্ব, অঙ্গ বিকল হওয়া এমনকি মৃত্যুও।
এই সমস্যা সমাধানে ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যেখানে মায়ের ডিম্বাণুর নিউক্লিয়ার ডিএনএ একটি স্বাস্থ্যবান ডোনার ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করা হয়, যার মাইটোকন্ড্রিয়া সুস্থ কিন্তু নিউক্লিয়ার ডিএনএ মুছে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যে ভ্রূণ তৈরি হয়, তাতে তিনজনের ডিএনএ থাকে- মা, বাবা ও ডোনার নারীর মাইটোকন্ড্রিয়া।
নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় ও মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা ২২ জন নারীর নিষিক্ত ডিম্বাণুতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন এবং এর ফলে ৮টি শিশু জন্ম নেয়, যাদের মধ্যে কোনো মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ দেখা যায়নি। একজন মা এখনও গর্ভবতী।
ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী রবিন লাভেল-ব্যাজ জানিয়েছেন, একটি শিশুর মধ্যে সামান্য পরিমাণে ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া ছিল, তবে সেটি রোগ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট নয় এবং শিশুটি পর্যবেক্ষণে থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় অফ অক্সফোর্ডের প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্ডি গ্রিনফিল্ড এই পদ্ধতিকে "বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের এক বিস্ময়কর সাফল্য" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি শুধুমাত্র তাদের জন্য ব্যবহার করা হবে যাদের অন্য কোনও পদ্ধতিতে জিনগত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
তবে এই পদ্ধতি এখনো অনেক দেশে অনুমোদিত নয়। যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালে আইনের মাধ্যমে এই পদ্ধতি বৈধ করে। অস্ট্রেলিয়াতেও এটি অনুমোদিত, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এই ধরনের ভ্রূণের উত্তরাধিকারযোগ্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু দাতার ডিএনএ-র পরিমাণ ১% এরও কম, তাই এতে সন্তানের দাতার কোনো গুণাবলি দেখা যায় না। বরং এটি হাড়ের মজ্জার দান বা রক্তদান থেকে অনেক কম প্রভাব ফেলে।
মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগে নিজের সন্তান লিলিকে হারানো লিজ কার্টিস বলেন, “এই ধরনের সাফল্য নতুন আশার আলো দেখায়, যেখানে আগে শুধু অসহায়ত্ব ছিল।” তিনি লিলি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন এই রোগ নিয়ে গবেষণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, এবং নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির এই গবেষণাকেও সমর্থন করেন।
মুমু ২