
ছবিঃ সংগৃহীত
২৬ বছর বয়সে নিজেকে বদলে ফেলার সাহসী সিদ্ধান্ত নেন প্রিয়াংশ তিওয়ারি। এক বছরে ৩৬ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি ফিরে পেয়েছেন আত্মসম্মান ও মানসিক প্রশান্তি—না কোনো শারীরিক সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে, না সামাজিক স্বীকৃতির জন্য। বরং তিনি শুধু নিজেকে ভালোবাসার জন্যই এই পরিবর্তনের পথে হাঁটেন।
১০১.৮ কেজি ওজন নিয়ে জীবনের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন প্রিয়াংশ, যেখানে নিজেকে অপছন্দ করা শুরু হয়। “আমি চাইতাম আয়নায় নিজেকে দেখে আবার ভালো লাগুক। অন্যদের দেখানোর কিছু নয়, নিজেকে সম্মান করার জন্যই আমি শুরু করি,”—বলেছেন তিনি।
"আমি আর নিজেকে লুকাতে চাইনি"
প্রিয়াংশ বলেন, “আমি নিজেকে দেখলে মনে হতো এটা যেন আমার শরীর নয়। আয়না এড়িয়ে চলতাম। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম যখন কেউ বলেছিল, 'তুই তো এখন একদম কাকু দেখাচ্ছিস।' সেই কথাটা আমাকে দগ্ধ করেছিল। তবে সেটা আমার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।”
"তারা হেসেছিল, আমি চুপ ছিলাম"
শুরুর দিকে আশেপাশের মানুষ উৎসাহের বদলে কটাক্ষ করেছিল। কেউ বলেছিল, “দেখিস, এক কেজিও কমাতে পারবি না।”
তবুও তিনি চুপ ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, প্রতিদিন নিয়ম মেনে কাজ করলে ফল আসবেই। তিনি প্রতিটি দিনকে কাজে লাগিয়েছেন, প্রতিটি খাবার আর জিম সেশনকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
"ছয় দিন ওয়েট ট্রেনিং, সাত দিন মনোযোগ"
প্রিয়াংশের শরীরচর্চার ধরন ছিল সাধারণ কিন্তু নিয়মিত। সপ্তাহে ছয় দিন ভারোত্তোলন করতেন, সঙ্গে ৩০ মিনিট করে কার্ডিও। রোববারগুলো বিশ্রামের দিন ছিল না—তিনি হাঁটতেন ৭-৮ কিলোমিটার। “এই হাঁটাগুলো শুধু শরীর সচল রাখার জন্য নয়, বরং মন পরিষ্কার করার জন্যও ছিল,”—বলেন তিনি।
"খাবার ছিল না শত্রু, বরং বোঝার বিষয়"
সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল—ডায়েট মানে না খেয়ে থাকা নয়। বরং সচেতনভাবে খাওয়া। তিনি ক্যালরি হিসেব করে হালকা ঘাটতির মধ্যে ডায়েট করতেন। উচ্চ প্রোটিন, মাঝারি কার্ব, এবং কম ফ্যাট যুক্ত খাবার ছিল তার রুটিনে।
প্যাকেটজাত খাবার বাদ, চিট মিল বাদ। শুধু বাস্তবসম্মত, পুষ্টিকর খাবার।
প্রিয়াংশের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা ছিল এমন:
-
২ স্কুপ হুই প্রোটিন (মাংসপেশি পুনর্গঠনে সহায়ক)
-
৫০ গ্রাম চিনাবাদাম + ৫০ গ্রাম ভাজা ছোলা (স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎস)
-
২০০ গ্রাম টকদই
-
১-২টি বেসনের চিলা বা সেদ্ধ ছোলা
-
কাঁচা সবজি: গাজর, শসা, টমেটো, বিট, পেঁয়াজ
-
তরমুজ (পানিশূন্যতা রোধে সহায়ক ও তৃপ্তিকর)
-
প্রতিদিন ৪ লিটার পানি
"৩৬ কেজি হালকা, কিন্তু যা পেয়েছি তা আরও মূল্যবান"
এক বছরে ওজন কমে ৬৫ কেজি হয়। কিন্তু সংখ্যা শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন দেখায়। ভিতরের পরিবর্তন আরও গভীর।
তিনি বলেন, “যা পেয়েছি, তা হলো—
-
নিঃশব্দ কিন্তু অটল আত্মবিশ্বাস
-
অভ্যাসের বদলে স্বাস্থ্যকে বেছে নেওয়ার জন্য আত্মসম্মান
-
বেশি কাজ করার শক্তি
-
সুস্থ শরীরের সঙ্গে পরিষ্কার চিন্তা
-
যারা আগে হাসাহাসি করত, এখন পরামর্শ চাই
আমি গর্ব করি না, শুধু বলি—নিয়ম মেনে চলাই ছিল সাফল্যের চাবিকাঠি।”
"কোনও ম্যাজিক নয়, শুধু একটি সত্যিকারের কারণ"
“অনেকেই বলে—সন্ধ্যার পর খেও না, এই জুস খাও, এই সাপ্লিমেন্ট নাও—এইসব কিছুই আমার কাজে আসেনি। আমি শুধু একটা কারণ দিয়েই শুরু করেছিলাম—আবার নিজেকে সম্মান করতে চেয়েছিলাম। কোনও শর্টকাট, কোনও ট্রেন্ড নয়—শুধু প্রতিদিনের প্রতিশ্রুতি।”
উপসংহার:
প্রিয়াংশ তিওয়ারির গল্প প্রমাণ করে, বড় পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন শুধু একটি সৎ কারণ, নিয়মিত চর্চা ও নিজের প্রতি প্রতিশ্রুতি। আত্মসম্মান ফিরে পাওয়ার পথ শুরু হয় আজকেই, শুধু দরকার সাহস ও স্থিরতা।
ইমরান