ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

সিরিয়া-ইসরায়েল উত্তেজনার কেন্দ্রে কেন দ্রুজ সম্প্রদায়?

প্রকাশিত: ০১:১৬, ১৮ জুলাই ২০২৫

সিরিয়া-ইসরায়েল উত্তেজনার কেন্দ্রে কেন দ্রুজ সম্প্রদায়?

ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ায় ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ায় আলোচনায় এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী অথচ অনেকটাই অবহেলিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু—দ্রুজ। দক্ষিণ সিরিয়ায় লড়াই তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল দ্রুজ বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি তুলে সিরীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের এই বহু ধর্ম-বর্ণের অঞ্চল নতুন করে অস্থিরতায় জড়িয়েছে।

কে এই দ্রুজ সম্প্রদায়?

দ্রুজরা আরব হলেও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ইসলাম থেকে উদ্ভূত, তবে এটি এক আলাদা ধর্মীয় মতবাদ যা ১১শ শতকে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের বিশ্বাসে একেশ্বরবাদ, পুনর্জন্ম ও সত্যের সন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। তারা তাদের ধর্মচর্চার বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখে। কিছু কট্টর সুন্নি মতাবলম্বী দ্রুজদের ‘বিধর্মী’ বলে মনে করে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ—যিনি একসময় আল-কায়েদার সদস্য ছিলেন—দ্রুজদের ‘সিরিয়ার সামাজিক অবকাঠামোর অংশ’ বলে উল্লেখ করে তাদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

দ্রুজরা কোথায় বাস করে?

দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সুয়েইদা ও কুনেইত্রা প্রদেশে এবং দামেস্কের উপশহর জারামানায় বসবাস করে। ইসরায়েলে তারা উত্তরাঞ্চল ও দখলকৃত গোলান মালভূমিতে অবস্থান করে। লেবাননের চুফ ও আলেই পাহাড়ি অঞ্চল এবং দক্ষিণের হাসবায়া এলাকাতেও দ্রুজদের বসতি রয়েছে।

আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা কী?

সংখ্যায় অল্প হলেও দ্রুজরা মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইসরায়েলে প্রায় ১.৫ লাখ দ্রুজ বাস করে, যাদের অনেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করে। গাজা যুদ্ধেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল।
তবে গোলান মালভূমির দখলকৃত অঞ্চলে থাকা প্রায় ২০ হাজার দ্রুজ নিজেদের এখনও সিরিয়ান হিসেবে পরিচয় দেয় এবং তাদের পরিবার রয়েছে সিরিয়ার ভেতরে।

ইসরায়েলি সরকার এসব সিরিয়ান দ্রুজদের রক্ষার অজুহাতে এই বছর একাধিকবার সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে।

সিরিয়ায় দ্রুজদের অবস্থা

সিরিয়ায় দ্রুজদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের সময় তারা কিছু প্রতিবাদ করলেও সরকারবিরোধী লড়াইয়ে সরাসরি জড়ায়নি।
তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসলামপন্থী নতুন সরকারের সঙ্গে দ্রুজদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
দ্রুজ নেতা শেখ হিকমাত আল-হাজারি সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কাছে সাহায্যের আহ্বান জানান, যা বিতর্ক সৃষ্টি করে।

লেবাননের প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা ওয়ালিদ জুমব্লাট এই অবস্থানকে সমর্থন করেননি। তিনি ইসরায়েলের ‘রক্ষা দাবি’ প্রত্যাখ্যান করে সিরিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের উদ্দেশ্য কী?

আসাদের আমলেও ইরান ও তার মিত্রদের উপস্থিতি ঠেকাতে ইসরায়েল সিরিয়ায় হামলা চালাত। এখন নতুন সরকারকে ‘জিহাদি হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরে ইসরায়েল বলছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় তারা কোনো শত্রু শক্তির উপস্থিতি সহ্য করবে না এবং দ্রুজদের রক্ষায় তারা প্রয়োজনে আবারও পদক্ষেপ নেবে।

ইসরায়েল সিরিয়ার কিছু ভূখণ্ড দখল করেছে যা গোলান মালভূমির পাশে। এ নিয়ে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট শারাআ ইসরায়েলকে বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ এনে বলেছেন, তারা সিরিয়ার জনগণের ঐক্য ভাঙতে চায়।

আঁখি

×