ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

ভারতের গুহা থেকে উদ্ধার রুশ নারী ও দুই সন্তান, রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ১৮ জুলাই ২০২৫

ভারতের গুহা থেকে উদ্ধার রুশ নারী ও দুই সন্তান, রহস্য ঘিরে ধোঁয়াশা

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের গোকর্ণার জঙ্গলে একটি গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে রাশিয়ান নারী নিনা কুটিনাকে ও তার দুই মেয়েকে। ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও কিভাবে তারা সেখানে এলেন, কেনইবা গুহায় বাস করছিলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার নয়।

৪০ বছর বয়সী কুটিনা ও তার ছয় ও পাঁচ বছরের দুই মেয়েকে ৯ জুলাই পুলিশ উদ্ধার করে। তারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে অবস্থান করছিলেন। বর্তমানে তারা বেঙ্গালুরুর কাছাকাছি একটি বিদেশি বন্দি কেন্দ্রে রয়েছেন এবং শিগগিরই তাদের দেশছাড়া করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নিনা কুটিনা দাবি করেছেন, তিনি ও তার সন্তানরা প্রকৃতির মাঝেই ভালো ছিলেন। ANI-কে দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “প্রকৃতি ভালো স্বাস্থ্য দেয়।”

ঝুঁকিপূর্ণ গুহায় বসবাস

উত্তর কানাড়া জেলার পুলিশ সুপার এম নারায়ণ জানান, গোকর্ণার রামতীর্থ পাহাড়ের জঙ্গলে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টহল দেওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা গুহাটিতে পৌঁছান। রঙিন কাপড় শুকাতে দেখে গুহার দিকে এগিয়ে যান তারা।

গুহার প্রবেশপথ রঙিন শাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল। ভেতরে দেখা যায় নিনা কুটিনা ও তার দুই শিশু – যাদের সঙ্গে ছিল শুধুমাত্র প্লাস্টিকের চাটাই, কিছু জামাকাপড়, নুডলসের প্যাকেট ও সামান্য খাবার। গুহাটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও জলচুয়ানো।

পুলিশ তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা সম্পূর্ণ শারীরিকভাবে সুস্থ বলে জানা যায়। কুটিনা বলেছিলেন, “জঙ্গলের সাপ আর পশুরা আমাদের বন্ধু, মানুষই বিপজ্জনক।”

কে এই নিনা কুটিনা?

ভারতের বিদেশি নিবন্ধন অফিস সূত্রে জানা যায়, নিনা কুটিনা একজন রাশিয়ান নাগরিক। তার পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বৈধ ব্যবসা ভিসায় ভারতে ছিলেন। এরপর তিনি ওভারস্টে করেন এবং ২০১৮ সালে তাকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

তিনি জানান, গত ১৫ বছরে রাশিয়ায় থাকেননি, বরং কোস্টারিকা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ইউক্রেনসহ অন্তত ২০টি দেশে ভ্রমণ করেছেন। তার চার সন্তান রয়েছে, যার মধ্যে বড় ছেলে ২০২৩ সালে গোয়াতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার ১১ বছরের আরেক ছেলে বর্তমানে রাশিয়ায় রয়েছে।

পিতার খোঁজ ও অভিভাবকত্বের লড়াই

পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া দুই কন্যার পিতা একজন ইসরায়েলি ব্যবসায়ী, দ্রোর গোল্ডস্টেইন। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং কুটিনা ও সন্তানদের প্রত্যাবাসনের ব্যয়ভার গ্রহণের জন্য তার সঙ্গে আলোচনা চলছে। গোল্ডস্টেইন বলেন, কুটিনা তাকে না জানিয়ে গোয়া ছেড়েছিলেন এবং তিনি পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন। বর্তমানে তিনি সন্তানদের যৌথ হেফাজত চান এবং চান না যে তারা রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হোক।

কেন গুহায়?

গুহার ভিতরে হিন্দু দেবতা পাণ্ডুরঙ্গা ভিট্টলের একটি মূর্তি পাওয়া যাওয়ায়, ধারণা করা হচ্ছিল তিনি সাধনা বা আধ্যাত্মিকতার জন্য সেখানে ছিলেন। কিন্তু কুটিনা জানান, “এটা কোনো আধ্যাত্মিকতা নয়, আমরা প্রকৃতি ভালোবাসি কারণ এটা স্বাস্থ্য দেয়। আমরা অনেক ভালো ছিলাম, waterfall-এ সাঁতার কাটতাম, আঁকা করতাম, মাটি দিয়ে শিল্প করতাম।”

তিনি বলেন, “আমার সন্তানদের আমি জঙ্গলে মরতে নিয়ে আসিনি। তারা খুশি ছিল, সুস্থ ছিল।”

অবশেষে কী হবে?

কুটিনা স্বীকার করেছেন যে তার বর্তমান ভিসা কয়েক মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। তবে তিনি বলেছেন, ছেলের মৃত্যুশোকের কারণে তিনি কিছুই ভাবতে পারছিলেন না। ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ান কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কুটিনা ও তার সন্তানদের দেশছাড়া করা হবে।

Jahan

×