
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার গোপালগঞ্জে দিনভর সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর পর রাত থেকে শুরু হয় কারফিউ যা এখনো চলছে। পুরো জেলায় এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারফিউ জারির পর থেকে গোপালগঞ্জের রাস্তাঘাট প্রায় জনমানবশূন্য।
"এখন পর্যন্ত শহরের সব দোকান-পাট বন্ধ। দু'একটা রিকশা চলছে। রাস্তায় সেভাবে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
গতকালের গোপালগঞ্জ ইস্যুতে ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য হিন্দু, "ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী হাসিনার সমর্থকদের সাথে বাংলাদেশি বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪ জন নিহত" এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
হিন্দুর প্রতিবেদনে জানানো হয়, গোপালগঞ্জে নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থকদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন । সংঘর্ষের সময় পুলিশের সাথে লাঠি-রড দিয়ে লাগাতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করা হয়, গাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় ।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে জাতীয় সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন ছাত্র সংগঠনের “July March to Rebuild the Nation” শীর্ষক সমাবেশ থেকে। তারা গোপালগঞ্জের দিকে মিছিল করে, যা শেখ হাছিনার রাজনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়।
নিঃসন্দেহে ঘটনা আরও ঘোরালো হয় যখন পুলিশ ও সেনা বাহিনী বেলা গোপালগঞ্জের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কারফিউ জারি করা হয় ।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ঘটনা তীব্রভাবে নিন্দা করেছে এবং সরকারকে কর্মীদের প্রতি সহিংসতা দমনে অভিযুক্ত করেছে। দেশের অস্থির অবস্থা বাড়তে থাকায় আগামী নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ।
ভারতের আরেক প্রভাবশালী মিডিয়া আনন্দবাজার "দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুরে রণক্ষেত্র হাসিনার জেলা! নিহত বেড়ে চার, গোপালগঞ্জে চলছে কার্ফু, আটক ১৪" এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর বুধবার রাত থেকেই কারফিউ চলছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জেলা গোপালগঞ্জে। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য উত্তেজনা কমেছে। থমথমে পরিবেশ। রাস্তাঘাটেও বেরিয়েছেন কেউ কেউ। তবে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠার রেশ এখনও কাটেনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সমাবেশ ঘিরে বুধবার চরম উত্তেজনা তৈরি হয় গোপালগঞ্জে। গুলি এবং গ্রেনেড হামলায় অন্তত চার জন নিহত হন।
প্রাণ হারান গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালিপাড়ার রমজান কাজী (১৮), সদর উপজেলার ভেড়ার বাজারের ইমন (২৪) এবং টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১)।
এনসিপি নেতৃত্বের দাবি, কয়েকশো সশস্ত্র আওয়ামী সমর্থক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে তাঁদের সমাবেশস্থলের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মহম্মদ পিয়ালের নেতৃত্বে উন্মত্ত জনতা মঞ্চ ভাঙচুর করতে শুরু করেন। তাঁরা পুলিশের গাড়িতেও আগুন জ্বালিয়ে দেন বলে অভিযোগ। হামলা হয় জেলাশাসকের বাসভবনেও। পুলিশ ও সেনা সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কোনও রকমে এলাকা ছাড়েন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। তবে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় চার জনের। অন্তত ন’জন গুলিবিদ্ধ হন।
জি নিউজ অবশ্য একেবারে ভিন্ন খবর প্রকাশ করে। যা বাংলাদেশিদের মধ্যে নিন্দার ঝড় তৈরী করে। জি নিউজ "বদলার বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধুর কবর ভাঙতে গিয়ে পাবলিকের হাতে বেদম মার খেলেন পাক-দালাল ছাত্রনেতারা" এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। যে সংবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সচেতন মহল ও নেটিজেনরা।
"ফের উত্তাল বাংলাদেশ, দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, জারি কারফিউ" এবিপি এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
এবিপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফের উত্তাল বাংলাদেশ। রণক্ষেত্র বঙ্গবন্ধুর গোপালগঞ্জ। গতকাল দিনভর দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ সন্ধে ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কার্ফু জারি। বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান, শেখ হাসিনার জেলা গোপালগঞ্জ আওয়ামি লীগের গড় বলে পরিচিত। গতকাল গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জের‘ ডাক দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি NCP। সেখানে মঞ্চ ভাঙচুর ও হামলা চালান আওয়ামি লীগ ও ছাত্র লীগের নেতা-কর্মীরা।
এমনকি হামলার মুখেও পড়েন NCP নেতারা, শেষপর্যন্ত সেনা পাহারায় তাঁদের সমাবেশস্থল ছাড়তে হয়। DC-র বাসভবন, জেল চত্বরের আশেপাশে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকার বাইরে অন্তত ২০টি জায়গায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে বাংলাদেশ পুলিশ।
ফুয়াদ