ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

এপস্টাইন বিতর্কে বেকায়দায় ট্রাম্প, দায় চাপাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটদের ঘাড়ে

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ১৭ জুলাই ২০২৫

এপস্টাইন বিতর্কে বেকায়দায় ট্রাম্প, দায় চাপাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটদের ঘাড়ে

জেফরি এপস্টাইনকে ঘিরে পুরনো বিতর্কে আবারও রাজনৈতিক চাপে পড়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমালোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে এবার তিনি কৌশলে দোষ চাপাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটদের ওপর, আর কিছু রিপাবলিকানকেও দিচ্ছেন দায় ভাগাভাগির সুযোগ।

বুধবার হোয়াইট হাউসে বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন হামিদ আল খলিফার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “সবই একটা ভাঁওতা। ডেমোক্র্যাটদের সাজানো। চার বছর ধরে তারাই চালাচ্ছে এই নাটক।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু বোকা রিপাবলিকান এই ফাঁদে পড়ে ডেমোক্র্যাটদের কাজ করে দিচ্ছে। ডেমোক্র্যাটদের আসলে কোনো কাজই নেই, এসব ভাঁওতা ছাড়া।”

এধরনের মন্তব্যে ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্ট, কারণ এ ইস্যুতে তার নিজস্ব রাজনৈতিক ঘাঁটির অনেকেই অসন্তুষ্ট। বুধবার সকালের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “আমার আগের সমর্থকরাও ডেমোক্র্যাটদের ঠকবাজিতে পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলেছে।”

ট্রাম্পের এই আবেগী আপিলে তার নিজের দল এবং সমর্থকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। বিশেষ করে, ডানপন্থী মহলে বহুদিন ধরেই ধারণা ছিল যে এপস্টাইন ইস্যুতে আরও বড় কিছু তথ্য সামনে আসবে।

ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী লরা লুমার ও কংগ্রেস সদস্য লরেন বোবার্ট ইতোমধ্যেই এপস্টাইন সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতে একজন বিশেষ কৌঁসুলির নিয়োগ দাবি করেছেন।

অবশ্য সমস্যার শিকড় রয়েছে আরও গভীরে। ট্রাম্প প্রশাসন যতটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবে তার খুব কমই পূরণ হয়েছে। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এবং উপ-পরিচালক ড্যান বংগিনো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এপস্টাইন ইস্যুতে বড় কোনো তথ্য সামনে আসবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের সময়, ট্রাম্পপুত্র ডন জুনিয়র এবং ভবিষ্যতের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও বলেছিলেন, জনগণকে সত্য জানানো থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত রাখা হচ্ছে।

জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক ও বিত্তবানদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। দুই দশক আগে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় তিনি যেভাবে রেহাই পেয়েছিলেন, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। সে সময় তিনি পতিতাবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু মৃত্যুর সময় তার বিরুদ্ধে নাবালিকাদের যৌন পাচারের মতো আরও গুরুতর অভিযোগ চলমান ছিল।

২০০২ সালে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজেই এপস্টাইনকে "চমৎকার লোক" বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেন, "তার ঝোঁক বয়সে ছোট মেয়েদের দিকে।" যদিও পরে ট্রাম্প ও এপস্টাইনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এপস্টাইনের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদেরও যোগসূত্র ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এক বইতে লিখেছেন, তিনি এপস্টাইনকে ‘অদ্ভুত’ মনে করতেন, তবে তার অপরাধ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাম বন্ডি ফক্স নিউজ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এপস্টাইনের ক্লায়েন্ট তালিকা আমার টেবিলেই রয়েছে।” এই মন্তব্যই রিপাবলিকানদের মধ্যে আবারও আশা জাগিয়ে তোলে যে নতুন কিছু প্রকাশ হতে যাচ্ছে।

কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে এফবিআই ও বিচার বিভাগের যৌথ এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তেমন কোনো ‘অপরাধমূলক ক্লায়েন্ট তালিকা’ বা এপস্টাইনের ব্ল্যাকমেইল সংক্রান্ত প্রমাণ তাদের হাতে নেই। একইসঙ্গে, বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয় যে, ২০১৯ সালের আগস্টে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে এপস্টাইন আত্মহত্যা করেন।

এই বিবৃতি যেন ট্রাম্প শিবিরের প্রত্যাশার গায়ে বরফের জল ঢেলে দিয়েছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ডি ও বংগিনোর মধ্যে এ নিয়ে বিরোধের খবর ছড়ায়। শোনা যায়, বংগিনো পদত্যাগ করতে পারেন। যদিও এখন পর্যন্ত তার কোনো পদত্যাগপত্র জমা পড়েনি। ট্রাম্প নিজেও প্রকাশ্যে বন্ডির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বুধবারও ট্রাম্প বলেন, “আমার অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রকাশ করা হবে। আর সে কি এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারে?”

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা চাপ বাড়াচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রো খান্না এপস্টাইন সংক্রান্ত তথাকথিত ‘ফাইল’ প্রকাশে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন, যেটিকে রিপাবলিকান সদস্য থমাস ম্যাসিও সমর্থন করেন।

হাউস স্পিকার মাইক জনসন শুরুতে মনে করিয়েছিলেন, ট্রাম্প যেন সব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করেন এবং জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দেন। তবে পরদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা স্বচ্ছতার পক্ষে। আমি যা বলেছি, প্রেসিডেন্টও সেটাই বলছেন। সব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য জনগণের কাছে যেতে হবে, কারণ আমরা জনগণের উপর আস্থা রাখি, প্রেসিডেন্টও তাই করেন।”

তবে এখন পর্যন্ত এপস্টাইন ইস্যুতে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়নি। কীভাবে এই বিতর্ক সামাল দেবেন ট্রাম্প, সেটিই এখন রাজনৈতিক মহলের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।

আফরোজা

×