
কুমিল্লার তিতাসের দড়িকান্দি রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া বরিশালের ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজ নামে গলা কাটা এক যুবকের হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে কুমিল্লা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পি.বি.আই)।
মায়ের সঙ্গে পরকীয়া ও মেয়ের সঙ্গে যৌন হয়রানির জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে ফুসলিয়ে কুমিল্লার তিতাসে এনে শ্বাসরোধের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়।
এই হত্যা কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৩জনকে আটকের পর ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জানিয়েছেন ( পি.বি.আই)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, বরিশালের কাজীরহাট থানার ছৈয়দক্তা এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ছেলে মো. সোহেল ইসলাম (৪০), তার ছেলে শাহীন ইসলাম (১৯) এবং সোহেলের মামা, মেহেন্দিগঞ্জ থানার হেসামউদ্দিন এলাকার মৃত জালাল হাওলাদারের ছেলে হানিফ হাওলাদার (৬১)।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।
তিনি জানান, ঘটনার একদিন পর ১৩ জুলাই শনিবার নিহতের বাবা দুলাল হাওলাদার বাদী হয়ে তিতাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পান কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবু বকর এবং তিনি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
এরপর ১৫ জুলাই মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী সোহেল ও তার ছেলে শাহীনকে এবং তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৬ জুলাই বুধবার রাজাবাজার এলাকা থেকে হত্যা কাণ্ডে সহায়তাকারী আবু হানিফ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার পেছনে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। মূল অভিযুক্ত সোহেল তার স্ত্রীকে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে রেখে ছেলে শাহীনকে নিয়ে ঢাকায় গাড়ি চালাতেন। বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে নিহত ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজ পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে।এরপর সে স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে এলেও তার মাদ্রাসা পড়ুয়া ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে দাদির কাছে বরিশালে রেখে আসেন। এই সুযোগে ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজ তার মায়ের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে সোহেলের মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং তার সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করে। এই ঘটনাটিও সোহেলের কানে পৌঁছালে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছেলে ও মামার সঙ্গে মিলে ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার দিন ১২জুলাই শনিবার আসামিরা একটি লাল মাইক্রোবাসে করে ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজকে সিলেটে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজকে নিয়ে তাদের সঙ্গে রওনা হন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি সিলেটে না গিয়ে কুমিল্লার তিতাসের জিয়ারকান্দি এলাকায় গাড়ির ভেতরেই ৩ জন মিলে ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গাড়ি থেকে নামিয়ে মরা দেহটি রাস্তার পাশে ফেলে গলা কেটে দেন এবং ছুরিটি লাশের পাশেই ফেলে পালিয়ে যান।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামিকেই বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে এবং এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই শনিবার কুমিল্লার তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের পাওয়ার হাউস সংলগ্ন (দড়িকান্দি) এলাকায় সড়কের পাশে গলাকাটা অবস্থায় অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে তিতাস থানা পুলিশ। পড়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ছায়া তদন্তে করে যুবকের নাম ইমতিয়াজ ওরফে রিয়াজ (২২)। সে বরিশালের কাজীরহাট থানার পূর্ব রতনপুর এলাকার দুলাল হাওলাদারের ছেলে হিসেবে নিশ্চিত হন।
রাজু