
ছবি:সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা আরমান এক টকশোতে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পিয়াল এবং তার অনুসারীরা হামলায় অংশ নেয়। এছাড়া জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুরান ঢাকার চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ইমরান হোসাইন জনকেও লাইভে দেখা গেছে হামলায় অংশ নিতে।”
তিনি দাবি করেন, আজকের তারিখটি আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকী। আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, অথচ এখনো তার মৃত্যুর বিচার প্রক্রিয়া অগ্রসর হয়নি। আরমান বলেন, “আবু সাঈদের ভাই আজ আক্ষেপ করে বলেছেন, এক বছর পরও কোনো বিচার হয়নি, যদিও আমরা বারবার দাবি করে আসছি।”
টকশোর আলোচনায় আরমান বলেন, “আজকের দিনে চারজনের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই না, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে কেউ মারা যাবে। তবে গোপালগঞ্জে যে সহিংসতা হয়েছে সেটিও পরিকল্পিত ছিল।” তিনি আরও বলেন, “ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে পুলিশের গাড়ি, ইউএন-এর গাড়ি, জেলা কারাগার, রিপোর্টার্স ইউনিটি অফিস, এবং আমাদের সমাবেশস্থলে হামলা চালিয়েছে।”
আরমান অভিযোগ করেন, “অনেকেই ভাবতেন এসব সন্ত্রাসী হয়তো কারাগারে বা বিদেশে পালিয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা এখনো গোপালগঞ্জে সক্রিয় এবং যে কোনো সময় সহিংসতায় লিপ্ত হতে প্রস্তুত।”
এনসিপি নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা ঘটেছে। তিনি বলেন, “আজকের এই হামলা আটকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। যারা রাস্তায় ছিল, তাদের জীবনের ঝুঁকি ছিল প্রকট। সেক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।”
তবে সহ-আলোচকের প্রশ্নের উত্তরে আরমান জানান, “আমরা কখনোই পুলিশের গুলির পক্ষে নই। তবে পরিস্থিতি যদি ভয়াবহ হয় এবং কোনো বিকল্প না থাকে, তখন কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, তা ভাবার বিষয়।”
আবু সাঈদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি, এনসিপির কর্মী আবু সাঈদ পুলিশ গুলিতে নিহত হয়েছেন। আজকের তারিখটি তার শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এখনো তার হত্যার বিচার হয়নি। এই বিচার না হওয়া সরকারের ব্যর্থতা।”
আলোচনায় উঠে আসে এনসিপির ৬৪ জেলা পদযাত্রার প্রসঙ্গ। আরমান বলেন, “গোপালগঞ্জ ছিল আমাদের পদযাত্রার একটি অংশ। জনাব নাহিদ ইসলাম পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আমরা গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তনের জন্য আসিনি, এসেছি বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে। গোপালগঞ্জের মানুষ যেন চাকরিতে ও অন্যত্র বৈষম্যের শিকার না হন – এটাই ছিল মূল দাবি।”
তিনি আরও বলেন, “গোপালগঞ্জের ১২ লাখ মানুষ সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক নয়। আগের রাতে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নাম দেওয়া হয়েছিল, তবে সেটি গণভবন বা বঙ্গভবনের মতোই একটি পদযাত্রা ছিল। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণভাবে অধিকারের কথা বলা।”
সবশেষে আরমান বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে নির্মম হত্যাকাণ্ড আমরা দেখেছি, তা যেন আর না ঘটে। কিন্তু আজকের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেভাবে হামলায় অংশ নিয়েছে, তাতে বোঝা যায়, সরকারের ব্যর্থতা এখনো বিদ্যমান।”
মারিয়া