
ছবিঃ সংগৃহীত
এক সময় গ্রামের সন্ধ্যা মানেই ছিল ঘরে ঘরে হারিকেন বা কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনার দৃশ্য। সেই আলো-আঁধারের মধ্যে শিক্ষার্থীদের গলায় ভেসে আসত গুনগুন পাঠের শব্দ—যা শুধু পড়ালেখা নয়, বরং এক সামাজিক ঐক্য ও শিক্ষার প্রতি নিষ্ঠার প্রতীক ছিল।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—আজ সেই গুনগুন শব্দ কোথায়?
সময়ের স্রোতে বদলে গেছে সমাজ। বিদ্যুৎ এসেছে, প্রযুক্তি এসেছে, জীবনধারা হয়েছে আধুনিক। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে বিলীন হয়েছে শিক্ষার সেই প্রাণস্পন্দন। এখন সন্ধ্যা মানেই স্মার্টফোনের পর্দায় ডুবে থাকা শিশু-কিশোর, বইয়ের পাতার বদলে ইউটিউব বা টিকটকের রঙিন ভিডিও।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অভিভাবকেরাও যেন আজ প্রযুক্তির দাস। পরিবারে নেই সেই আগের মতো অনুশাসন, নেই পড়াশোনার প্রতি সম্মিলিত গুরুত্ব। ফলে সন্ধ্যার গুনগুন আওয়াজ এখন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিচ্ছে—যা কোনো একটি প্রজন্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
প্রযুক্তি যেমন প্রয়োজন, তেমনি তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও অপরিহার্য। শিশু-কিশোরদের বিকাশে ভারসাম্যপূর্ণ শেখার পরিবেশ তৈরি করা না গেলে আমরা শুধু প্রযুক্তিনির্ভরই হব, শিক্ষানির্ভর নয়।
আজকের শিশুরা যদি সন্ধ্যা মানেই ‘মোবাইল টাইম’ ধরে নেয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম কীভাবে বইমুখী হবে? তারা কীভাবে গড়বে একটি মূল্যবোধনির্ভর সমাজ?
আমরা মনে করি, এখনই সময় পরিবার, শিক্ষক ও সমাজকে একযোগে ভাবার। ফিরিয়ে আনতে হবে সেই হারিয়ে যাওয়া পড়ার পরিবেশ। গড়ে তুলতে হবে টিভি বা মোবাইলহীন অন্তত কিছু সময়—যেখানে বই পড়া, গল্প শোনা বা আলোচনার মাধ্যমে গড়ে উঠবে শিশুর চিন্তা, কল্পনা ও মেধা।
সন্ধ্যার সেই গুনগুন আওয়াজ যেন আর শুধু স্মৃতি না হয়—বরং হোক নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতীক। প্রযুক্তির ভিড়ে যেন না হারিয়ে যায় আমাদের শিকড়।
মারিয়া