ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

শ্রমবাজার বাড়াতে উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ১৭ জুলাই ২০২৫

শ্রমবাজার বাড়াতে উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হলো শ্রমবাজার। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই শ্রমশক্তির সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। অথচ ক্রমেই কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও উদ্বেগজনক। রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশিরা অবস্থান করছেন। এর মধ্যে মূলত ২৫টি বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। মাত্র দুই বছরে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ১৬টিতে। শ্রমবাজার কমার পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাজের পারমিট না থাকা সত্ত্বেও নানারকম অসদুপায়ে মাত্রাতিরিক্ত লোক পাঠানো, যোগ্যতার অভাব ও সরকারিভাবে সহযোগিতার সুযোগ না থাকা, পাঠানো শ্রমশক্তির সঠিক ডেটা না থাকা অন্যতম কারণ। এছাড়াও দক্ষতার অভাব, পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকা, ভাষা বুঝতে না পারাসহ সে দেশের কালচারের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাও অনেকাংশে দায়ী। 
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া, যা সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ২০২৩ সালের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিএমইটির ছাড়পত্র হওয়ার পরও ১৬ হাজার ৯৯০ জন কর্মী যেতে পারেননি। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে সেই কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সদ্যবিদায়ী যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, ‘শ্রমবাজারকে কাজে লাগাতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর মাধ্যমে বন্ধ থাকা শ্রমবাজারগুলো চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে, দেশের স্বার্থে সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। 
বাংলাদেশি অনেক নারী বিদেশে যান গৃহকর্মী হিসেবে। তাদের অনেকেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। এতে দিন দিন কমছে নারীদের বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা। এই অবস্থায় নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রণোদনা ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি। সরকারের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং বিদেশি শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। বাংলাদেশের যুব সমাজের কর্মক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে না পারলে জনসংখ্যা সম্পদ না হয়ে পরিণত হবে বোঝায়। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শ্রমশক্তিকে কতটা দক্ষ, উৎপাদনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলা যায় তার ওপর। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। তাই বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করা সময়ের দাবি।
 

প্যানেল/মো.

×