ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

দাউদকান্দি-মতলব সড়কের কাজ বন্ধ, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

সুমন আহমেদ, মতলব, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:২৫, ১৭ জুলাই ২০২৫

দাউদকান্দি-মতলব সড়কের কাজ বন্ধ, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

ছবিঃ সংগৃহীত

দাউদকান্দি-মতলব মহাসড়কের শ্রীরায়েরচর-ছেংগারচর সড়কের একটি অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে সড়কে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকলেও ঠিকাদার ও তার লোকজনের কোনো খোঁজ নেই। সড়কটির খারাপ অবস্থার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি-শ্রীরায়েরচর এবং চাঁদপুরের শ্রীরায়েরচর-ছেংগারচর পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এই সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিস্তারের লক্ষ্য ছিল।

২০২০ সালের ১ জুলাই শুরু হয় শ্রীরায়েরচর-ছেংগারচর সড়ক প্রকল্পের কাজ। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে জানা যায়, এ সড়কের মতলব অংশের দৈর্ঘ্য ১০.৫০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে ৫.২০০ কিলোমিটার এবং ৪.৮০০ কিলোমিটার কার্পেটিং বাকি রয়েছে। ছেংগারচর থেকে শিকিরকান্দি স্কুল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজও শেষ হয়নি। প্রকল্পের মোট ৭৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ২৫% বাকি রয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান টেকনো বিল্টার্স লিমিটেড। মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৬ কোটি টাকা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে ঠিকাদার ও তার লোকজনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অনুপস্থিতির কারণে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

এ সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। শুরু থেকেই মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এখন রাস্তাটি গর্ত ও ধুলাবালিতে ভরপুর। বৃষ্টির দিনে কাদায় ভরে যায় পুরো রাস্তাটি। এতে পথচারী, শিক্ষার্থী, রোগী ও যানবাহন চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তায় এত ধুলা যে, জানালা খুলে বসা যায় না। শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। বৃষ্টিতে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এলাকাবাসীরা জানান, এ সড়ক শুধু মতলববাসীর ব্যবহারের জন্য নয়, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবেও জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। তাই দ্রুত এই সড়কটির কাজ শেষ করা জরুরি।

গাড়ি চালক ইয়াসিন বলেন, “এই রাস্তায় ধুলায় চোখে কিছু দেখা যায় না। বৃষ্টি হলে রাস্তায় জিনিসপত্র নিয়ে গেলে কাদায় গাড়ি আটকে যায়। কখনো পিছলে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটে।”

হানিপাড়ার রোগী মরিয়ম বলেন, “চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে গিয়ে রাস্তায় এত কাঁপুনি লাগে যে শরীর ব্যথায় ভরে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য এই যাত্রা খুব কষ্টদায়ক।”

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, “একমাত্র এই সড়ক ব্যবহার করেই রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় রোগীরা অনেক সমস্যায় পড়ছে।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “ঠিকাদার ও তার লোকজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই মাস আগে কাজটি বাতিলের জন্য হেড অফিসে চিঠি দিয়েছি। সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় আছি। এর মধ্যে আগে করা কিছু কাজও নষ্ট হয়ে গেছে।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা ঠিকাদার ও তার প্রতিনিধিকে খুঁজে পাচ্ছি না। কাজের চুক্তি বাতিলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। চুক্তি বাতিল হলে নতুন প্যাকেজ তৈরি করে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে পারবো।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এর সঙ্গে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংযুক্ত। সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জনস্বার্থে দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করা প্রয়োজন।”

 
 

মারিয়া

×