ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

আবার ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়া সেই সকালের কুরআন তিলাওয়াত

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা 

প্রকাশিত: ০১:১৩, ১৮ জুলাই ২০২৫

আবার ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়া সেই সকালের কুরআন তিলাওয়াত

মক্তবের ঘণ্টা, শিশুর মুখে আলিফ-লা-মিম আর গলিতে প্রতিধ্বনিত হওয়া পবিত্র আয়াতের সুর—ফিরিয়ে আনতে হবে সেই সোনালি সকাল।

কোথায় হারিয়ে গেল সেই চেনা ভোর?
এক সময় ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের মসজিদে বাজত মক্তবের ঘণ্টা। শিশুরা দল বেঁধে হাতে কুরআনের ‘আমপারা’ আর স্লেট নিয়ে ছুটে যেত মসজিদের বারান্দায়। কণ্ঠে থাকত আলিফ-লা-মিম থেকে শুরু করে পবিত্র আয়াতের ঝঙ্কার। ভোরের পবিত্র বাতাসে মিশে যেত কুরআনের সুমধুর তিলাওয়াত।

আজ সেই চিত্র কোথায়?
মক্তব শব্দটাই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা আর ডিজিটাল দুনিয়ার কৃত্রিম ব্যস্ততায় শিশুরা আজ ঘুম ভাঙায় মোবাইল হাতে। দিন শুরু হয় ইউটিউব ভিডিও আর গেম দিয়ে। অথচ প্রজন্ম গড়ার ভিত্তি হতে পারত সকালের সেই এক ঘণ্টার কুরআন শিক্ষা।

মো. আ. সোবহান নামের একজন বৃদ্ধ বলেন— "আগে শিশুরা নামাজের আগে কুরআন পড়তে আসত। এখন তাদের সকালে ডাকা যায় না। ওদের ভোর শুরু হয় মোবাইল দিয়ে।"

মাওলানা কামরুল হাসান নামের একজন মক্তব শিক্ষক বলেন, "মক্তব চালাতে গেলে অভিভাবকেরা বলেন, ‘বাচ্চার স্কুল আছে, পড়ালেখা আছে, সময় নেই’। অথচ তারা জানে না, এই এক ঘণ্টা শিক্ষাই তার সন্তানকে মানুষ করে তুলবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা তো টাকা চাই না, চাই শিশুরা অন্তত আলিফ-লা-মিম শিখুক, নামাজ জানুক, হালাল-হারামের বোধ তৈরি করুক।"

হারিয়ে যাচ্ছে একটা প্রজন্মের আত্মিক শেকড়

মক্তব শুধু আরবি শেখানো নয়, ছিল শিষ্টাচার, দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা আর ইসলামী মূল্যবোধ শেখার অনন্য জায়গা। একজন ভালো মানুষ গড়ার সূচনা হতো এখান থেকেই। আজ আমরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছি, কোচিংয়ে পাঠাচ্ছি, কিন্তু তার আত্মা নির্মল হচ্ছে না।

কেন প্রয়োজন আবার সেই মক্তব?

নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে কুরআনের আলো একান্ত জরুরি

মক্তব শিশুর সময় ব্যবস্থাপনা শেখায়, সকালকে করে গঠনমূলক

পিতামাতার সঙ্গে সন্তানদের ধর্মীয় বন্ধন গড়ে তোলে

শিশুদের মনে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় শুরু থেকেই

আমরা কী করতে পারি?

প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আবার চালু হোক সকালের মক্তব।

মসজিদের ইমাম ও শিক্ষকদের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত হোক।

অভিভাবকরা নিজেরাই সচেতন হয়ে সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করুন কুরআন শিক্ষায়।

মোবাইল, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তির বিপরীতে মক্তবকে হোক একটা প্রাণবন্ত বিকল্প।

আমরা যদি চাই সন্তান নৈতিক ও আত্মিকভাবে শক্তিশালী হোক, তবে তাকে আবার নিয়ে যেতে হবে সেই সকালের পবিত্র দরজায়—যেখানে কুরআনের তিলাওয়াত জাগিয়ে তোলে হৃদয়ের ঘুমন্ত আলো।
ফিরে আসুক সেই মক্তবের ঘণ্টা। ফিরে আসুক হৃদয়ছোঁয়া কুরআনের সকাল।

 

রাজু

×