ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

হঠাৎ ছায়াশূন্য কাবা শরীফ: সূর্যের সরাসরি অবস্থান ঘিরে বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক বিস্ময়

প্রকাশিত: ০২:৪২, ১৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:৪৫, ১৭ জুলাই ২০২৫

হঠাৎ ছায়াশূন্য কাবা শরীফ: সূর্যের সরাসরি অবস্থান ঘিরে বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক বিস্ময়

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব সম্প্রতি এক বিরল ও আশ্চর্যজনক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। মক্কার পবিত্র কাবা শরীফের ঠিক উপরে সূর্যের সরাসরি অবস্থান তৈরি করেছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা বৈজ্ঞানিক এবং আধ্যাত্মিক—দু’দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মক্কার আকাশে সূর্য এমনভাবে অবস্থান করছিল যে, তা কাবার ঠিক উপরের বিন্দুতে পৌঁছায়। ফলে কাবার চারপাশের কোনো বস্তুর ছায়া পড়েনি—কেবলা হয়ে ওঠে ছায়াশূন্য। এই ছায়াহীন মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নির্ভুলভাবে কিবলার দিক নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। সূর্য যাদের কাছে দৃশ্যমান, তারা এ সময়ে সূর্যের দিকে মুখ করলেই কিবলার দিকে মুখ করা হয়ে যায়।

এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে জেদ্দা অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, সূর্য যখন কর্কট ক্রান্তি থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হয় এবং প্রায় ২১.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত মক্কার উপর দিয়ে অতিক্রম করে, তখন এ ঘটনা ঘটে। মক্কায় সূর্যের এই উলম্ব অবস্থা বছরে দু’বার ঘটে থাকে—একবার মে মাসের শেষ দিকে এবং আরেকবার জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে। এই ঘটনাকে বলা হয় ‘সোলার জেনিথ’।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, এই বিরল ঘটনাটি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে থাকে এবং এর মাধ্যমে আধুনিক কোনো যন্ত্র ছাড়াই মুসলমানরা সহজেই কেবলা নির্ধারণ করতে পারেন।

জেদ্দা অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির সভাপতি মাজেদ আবু জাহারা বলেন, “মক্কায় যোহরের নামাজের সময় এই বিরল সূর্যঘটনা বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক—দুই দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। সূর্যের এ অবস্থান মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে কেবলার দিক নির্ধারণে সহায়তা করে।”

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্য ও কাবার এই সরাসরি সজ্জাকে ‘জেনিথ পয়েন্ট অ্যালাইনমেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং একে প্রতিসরণ পর্যবেক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবেও দেখেন। তারা বলেন, “এ ধরনের সারিবদ্ধতা সৌরজগতের অবস্থান এবং বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের বৈজ্ঞানিক ধারণাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।”

এই বিরল প্রাকৃতিক ঘটনাটি মুসলিমদের কাছে যেমন কিবলা নির্ধারণের একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি, তেমনি বিজ্ঞানীদের জন্যও এটি গবেষণার এক মূল্যবান ক্ষেত্র।

শেখ ফরিদ

×