ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

কলাপাড়ায় খাল দখল ভোগান্তিতে মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৭ জুলাই ২০২৫

কলাপাড়ায় খাল দখল ভোগান্তিতে মানুষ

বৃষ্টি কমলেও জলাবদ্ধতা কাটেনি

তিন দিন আগে বৃষ্টির প্রকোপ কমেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার ধকল কাটেনি। এখনো অসংখ্য গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। বহু কৃষকের আমন বীজতলা করতে সমস্যা হচ্ছে। মানবসৃষ্ট এই জলাবদ্ধতার ধকল কাটাতে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পানি চলাচলের প্রাকৃতিকভাবে থাকা খাল-জলাশয় ভরাটের পাশাপাশি কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়াকে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন কৃষকরা। এতে বিলে চাষের জমির ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে গেছে। এছাড়া পানি ওঠানামার স্লুইসগেট ব্যবস্থাপনায় প্রভাবশালীদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে দূষছেন মানুষ। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে এসব খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সোনাতলা নদীর সেতু পেরিয়ে কুয়াকাটাগামী সড়কের ডান দিকের চাষাবাদের জমিতে এখনো হাটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। মহিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী ফজলু গাজী জানান, খাল-জলাশয় সব ভরাট হয়ে গেছে। এসব আবার বন্দোবস্ত নিয়ে মানুষ বাড়িঘর, পুকুর করেছে। পানি চলাচলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। শত শত কৃষক বীজতলা করতে পারছেন না।

চাষাবাদে ভোগান্তির শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। ইউসুফপুর, নিজামপুর, সুধিরপুর গ্রামের এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদা পারভিন জানান, স্কুলের খেলার ভরাট করে উঁচু করেছেন। তারপরও বিরামহীন বৃষ্টির পানিতে ডুবে ছিল। এখন পানি কমেছে। তারপরও একপাশে পানি জমে আছে। আশপাশের পানিও কমেছে। 
মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য জাকির হোসেন দুলাল জানান, তাঁদের দুইটা স্লুইস ঠিক রয়েছে। পানি নেমে গেছে। তবে বেড়িবাঁধের বাইরে কিছু এলাকার পানি জমে গেছে। আর ইউসুফপুর এলাকায় স্লুইসের সমস্যায় পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। নীলগঞ্জের ফতেহপুর গ্রামেও এখন পানি অনেকটা কমেছে। কৃষকরা বীজতলা করতে শুরু করেছেন। তবে পানি নামার স্লুইস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কৃষকের অসন্তোষ রয়েছে। কলাপাড়া পৌরশহর লাগোয়া টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলী গ্রামের শত বাড়িঘরের উঠোন, ঘরের পিরা পর্যন্ত পানি জমে আছে।

নাচনাপাড়া মাছ বাজার থেকে পূর্বদিকে বহমান খালটি দখল করে একের পর এক বাড়িঘর করায় পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়ায় এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নাচনাপাড়া চৌরাস্তায় থাকা এক ভেন্টের স্লুইস গেটটি পর্যন্ত বিলুপ্ত করা হয়েছে। এসব খালের বিলের খাস জমি পর্যন্ত দখল করে বাড়িঘর পুকুর করা হয়েছে। এভাবে উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার সরকারি খাস খাল-বিল-জলাশয় দখল করায় এখন বৃষ্টির পানি বের হওয়ার কোনো পথ থাকছে না।

মানব সৃষ্ট এমন জলাবদ্ধতার কবলে জনজীবনে এক ধরনের ভোগান্তি নেমে এসেছে। নইলে জোয়ার-ভাটার অঞ্চল কলাপাড়ায় নদীতে পানি না থাকলেও বেড়িবাঁধের ভেতরের পানিতে থৈ থৈ করছে গ্রামের পর গ্রাম। বৃষ্টি কমার তিন-চারদিন পরও জলাবদ্ধতা কাটছে না। গোটা ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। ড্রেনেজ খালগুলো হাওয়া হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন জানান, স্লুইসগেট যথাযথ নিয়ন্ত্রণের তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। জানালেন, গতকাল বুধবার রাতেও বাদুরতলী স্লুইসের গেট তিনি উপস্থিত থেকে সম্পুর্ণ খুলে পানি নামানোর ব্যবস্থা করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে এবছর ১০-১২টি খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। কলাপাড়া পৌরসভার খালের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। কৃষকের চাষাবাদের সমস্যা নিরসনে খালবিলের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে তারা সচেষ্ট রয়েছেন।

প্যানেল হু

×