
বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধ শিল্প তার অন্যতম। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় সিংহভাগ ওষুধ তৈরি হয় দেশেই। বিশ্বের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, কয়েকটি নামিদামি ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পানিও আছে, যারা তৈরি করছে নকল ও ভেজাল ওষুধ। ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এর পরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে।
বাজারে অবৈধ ফার্মেসি এবং ভেজাল ও নিষিদ্ধ ওষুধের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত প্রতিবেদন কয়েক মাস পর পরই জনস্বার্থে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। আইনানুগ দণ্ড দেওয়া হয় অপরাধীদের। তারপর আবার শুরু হয় একই বিপজ্জনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং বিশেষ সক্রিয়তার ধারাবাহিকতা জরুরি। অবৈধ ফার্মেসি এবং নকল-ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে এলোপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনকারী ৩০২টি কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত হলেও ২২৯ কোম্পানি নিয়মিত ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে ৬৩ কোম্পানির উৎপাদন সাময়িক বন্ধ, দুটি কোম্পানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। মার্কেটে শুধু ২০-২৫টি কোম্পানির ওষুধ পাওয়া যায়। অর্ধশতাধিক কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ শতাধিক দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এসবের বাইরে অন্য কোম্পানিগুলো কি ওষুধ বিক্রি করছে তা বিক্রেতারাও জানেন না। ঐসব কোম্পানির নিম্নমানের ভেজাল ও নকল ওষুধের দাম কম। ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের ওষুধের বাজার উপজেলা থেকে গ্রামাঞ্চলে সর্বাধিক।
দেশব্যাপী নকল ও জীবন রক্ষাকারী ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর চেয়ে গ্রামাঞ্চলে ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রি হয় বেশি। ওষুধের এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ওষুধ বিক্রেতাদের দাবি, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা চোখে পড়ে না, নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে একশ্রেণির কর্মকর্তা নিয়মিত মাসোয়ারা পাচ্ছেন। এ কারণে ভেজাল ও নকল ওষুধসামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিক্রেতারা সরাসরি জানান, বাজারে প্রায় ৪০ ভাগ ওষুধ ভেজাল ও নকল। আমদানীকৃত ওষুধ বেশির ভাগ নকল ও ভেজাল হয়। ইনসুলিনের মতো ওষুধও নকল হচ্ছে। বাজারে আমদানীকৃত বিদেশি ইনজেকশনেরও নকল পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন তারা।
চাহিদার তুলনায় ঔষধ প্রশাসনে জনবল কম। এ সীমিত জনবল দিয়ে নিয়মিত ওষুধসামগ্রী বিশাল মার্কেট মান নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তাই ওষুধ শিল্পে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ।
প্যানেল/মো.