ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি

এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি ৯৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৫, ১৭ জুলাই ২০২৫

এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি ৯৩ হাজার কোটি টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক-কর আদায়ের ঘাটতি

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক-কর আদায়ের ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ফলে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। বিদায়ী অর্থবছরে সব মিলিয়ে এনবিআরের শুল্ক, ভ্যাট ও কর বিভাগ আদায় করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আয়করে বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৪২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে।
এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। আইএমএফের এমন শর্তের মুখে এত বিশাল ঘাটতিতে পড়ল এনবিআর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল ছিল। আবার বছরের শেষ মাস জুনে এনবিআরের আন্দোলনের কারণে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি।

এ ছাড়া এনবিআরে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া; কর জাল বৃদ্ধি না পাওয়া, কর কর্মকর্তাদের সক্ষমতার অভাব, শুল্ক-কর ফাঁকি, পর্যাপ্ত অটোমেশন না হওয়াÑ এসব পুরানো কারণ তো আছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে করদাতাদের হয়রানি এবং ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগও আছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। অফিস আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় বেশ কয়েক দিন কার্ফু ছিল। এসব কারণে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হয়নি। এ ছাড়া বছরজুড়ে এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাও ছিল। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা ওই দুই মাসের লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। আবার আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের চেয়েও সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছিল।
এরপর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির আন্দোলন, দাবিদাওয়া, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপসহ নানা ঘটনায় বছরজুড়েই ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথগতি হয়। বছরের শেষ দিকে এসে যুক্ত হয় এনবিআরের সংস্কার নিয়ে আন্দোলন। জুন জুড়েই আন্দোলন চলে। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি পালন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোলসহ দেশের প্রধান কাস্টম হাউসে কাজ বন্ধ থাকে। সাধারণত জুনে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়।

জুনে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার মতো শুল্ক-কর আদায় হয়, কিন্তু এবার তা হয়নি। এনবিআরের হিসাব অনুসারে, জুন মাসে শুল্ক-কর আদায়ে লক্ষ্য ছিল ৬৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৩ হাজার ৯১ কোটি টাকা। শুধু জুনেই ঘাটতি প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। জুনের এই ঘাটতি এনবিআরের পুরো বছরের ঘাটতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। হিসাব মহানিয়ন্ত্রক বা সিজিএর সঙ্গে এনবিআরের হিসাবের গরমিল ঠিক করায় এবার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বেঁচে গেছে এনবিআর।

যখন এনবিআর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ের হিসাব দিয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল এনবিআর আদায় করেছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে হিসাব মহানিয়ন্ত্রক সিজিএর হিসাবে, কোষাগারে জমা হয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পার্থক্য প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এরপর এনবিআর কর্মকর্তা ও সিজিএ কর্মকর্তারা বৈঠক করে রাজস্ব আদায়ের হিসাবের এই পার্থক্য ঠিক করেন। সিজিএর হিসাব মেনে নেয় এনবিআর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এনবিআর আগের অর্থবছরের হিসাবও দেখানো হয়।

সেই তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা শুল্ক-কর আদায় হয়। এর ফলে বিদায়ী অর্থবছরের যত টাকা শুল্ক-কর আদায়ে তাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি বা প্রবৃদ্ধি হয়। যদি এনবিআরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরানো হিসাবটি আমলে নেওয়া হতো, তা হলে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যেত।

প্যানেল হু

×