ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ এর মৃত্যুবার্ষিকীতে অতল শ্রদ্ধা

শরিফুল রোমান

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৭ জুলাই ২০২৫

অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ এর মৃত্যুবার্ষিকীতে অতল শ্রদ্ধা

গুগলের সহায়তায় সম্পাদিত, ছবি: সংগৃহীত

অ্যাডাম স্মিথ বায়োগ্রাফি’ থেকে জানাগেছে, স্কটল্যান্ডে তার জন্ম আনুমানিক ১৭১৭ সালের ৫ই জুন মাসে। জন্মের দুই মাস পরেই স্মিথ অনাথ হয়ে যান। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, পণ্ডিত, অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিজ্ঞানী।
  
অর্থনীতির জনক হিসেবে খ্যাত অ্যাডাম স্মিথ  জন স্নেল কর্তৃক চালু হওয়া বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালে তিনি রচনা করেন ‘The Theory of Moral Sentiments’। ১৭৭৬ সালের তাঁর বিখ্যাত বই ‘An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations’। 

বইটিকে আধুনিক অর্থনীতিশাস্ত্রের মূল ভিত্তি বলা হয়। স্মিথ মনে করেন, অর্থনীতি হলো এমন একটি সম্পদের বিজ্ঞান, যা জাতিসমূহের সম্পদের প্রকৃতি ও কারণ অনুসন্ধান করে।

শিক্ষাজীবনে স্মিথ স্কটল্যান্ডে তখনকার বিখ্যাত এক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ল্যাটিন ভাষা, গণিত, ইতিহাস এবং সাহিত্য বিষয়ে পড়েন। আর ১৪ বছর বয়সে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ডে পড়তে যান।  

স্মিথ ১৭৪৮ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বজনীন সিরিজ বক্তৃতা শুরু করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার মাধ্যমে, ১৭৫০ সালে অ্যাডাম স্মিথ বিভিন্ন শ্রোতাদের মাঝে  সহজেই পরিচিত হন। 
বন্ধু হয় স্কটল্যান্ডের দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদ ডেভিড হিউমের সঙ্গে। এই সম্পর্ক স্মিথকে ১৭৫১ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিতে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।

অ্যাডাম স্মিথ সমসাময়িক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নয় বছর পরিশ্রমের পর ১৭৭৬ সালে রচনা করেন প্রকৃতি ও কারণসমূহ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক বই 'ওয়েলথ অব নেশনস'। যেটিকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক অর্থনীতি চর্চায় প্রথম কোনো রচনা হিসেবে।

সে সময়ে ওয়েলথ অব নেশনসের রচনা স্মিথকে সুদূরপ্রসারী খ্যাতি এনে দেয়। তার রচিত এই বইটি শাস্ত্রীয় অর্থনীতির মূল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী একটি বইয়ের খ্যাতি পায়।

তৎকালীন অর্থনীতি এমন ছিল যে, একটি দেশের জাতীয় সম্পদ পরিমাপ করা হতো সেই দেশে সংরক্ষিত মূল্যবান ধাতু সোনা এবং রূপার ভিত্তিতে। 

স্মিথ প্রস্তাব করেন, জাতীয় সম্পদকে এভাবে বিচার করা উচিত নয়, বরং একটি দেশের মোট উৎপাদন ও মোট বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত যাকে এখন আমরা জিডিপি বা গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট বলি।  

অ্যাডাম স্মিথ কেবল অর্থনীতির জন্য নয় তিনি শ্রমিকদের অর্থবণ্টন বিভাজন তত্ত্বেরও প্রবক্তা। এর মাধ্যমে বিশেষভাবে গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। 

স্মিথের ধারণা, মূলত শিল্প বিপ্লবের প্রারম্ভের একটি অর্থনৈতিক প্রতিফলন এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতি সমাজের জন্য সবচেয়ে ফলদায়ক এবং উপকারী। স্বতন্ত্র স্বার্থের উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তিনি তার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যা ‘অদৃশ্য হাত’ দিয়ে পরিচালিত হয় এবং সবার জন্য সবচেয়ে ভালো।

১৭৫৯ সালে স্মিথ রচনা করেন 'দ্যা থিওরি অব মোরাল সেন্টিমেন্টস'। যেটির প্রধান যুক্তি হলো মানব নৈতিকতা ব্যক্তি ও সমাজের অন্য সদস্যদের সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে। 

এই বই তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌছে দেয়। তিনি ফ্রান্স ভ্রমণের সময় দেখা পান সে সময়ের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন এবং ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ টুরগটের সঙ্গে।

অর্থনীতির বাইরেও বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন স্মিথ। যার মধ্যে আছে ‘এসে অন ফিলোসোফিক্যাল সাবজেক্ট, হিস্ট্রি অব অ্যাস্ট্রনমি এনসেন্ট ফিজিক্স, মেটাফিজিক্স, লেকচার অন জুরিস প্রুডেন্স, লেকচার অন জাস্টিস, পুলিশ, রেভেনিউ ও আর্মসের মতো বিষয়।

১৭৮৭ সালে স্মিথ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৭৯০ সালের ১৭ জুলাই ৬৭ বছর বয়সে মারা যান।

আজকের এই দিনে অর্থনীতির জনক বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ এর মৃত্যুবার্ষিকীতে অতল শ্রদ্ধা।

 

রাজু

×