
ছবিঃ সংগৃহীত
সফল সাইড হাসল শুরু করা এখন আর কষ্টসাধ্য নয়। আপনি চাইলে কেবল চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার করেই শুরু করতে পারেন একটি লাভজনক অনলাইন ব্যবসা, যার আয় সহজেই হতে পারে মাসে ৩,০০০ মার্কিন ডলার!
ব্যবসার আইডিয়া থেকে শুরু করে মার্কেট যাচাই, কনটেন্ট মার্কেটিং, সেলস কপিরাইটিং এবং এমনকি একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রোথ প্ল্যান—সব কিছুই আপনি তৈরি করে নিতে পারবেন চ্যাটজিপিটির সাহায্যে, তাও কোন বিশাল মূলধন বা বড় দল ছাড়াই।
বিশ্বের গিগ ইকোনমির বাজার ২০২৫ সালে দাঁড়াবে প্রায় ৬৪৬.৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে ছিল ৫৫৬.৭ বিলিয়ন। ২০৩৩ সালের মধ্যে এই বাজার ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার প্রায় ৮০ মিলিয়ন মানুষ সাইড হাসলে যুক্ত, যা মোট জনসংখ্যার ৩৬% থেকে ৪৪%। সফল সাইড হাসলাররা মূলত তাদের দক্ষতা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে থাকেন।
তবে চ্যাটজিপিটির কার্যকারিতা নির্ভর করে আপনি তাকে কীভাবে নির্দেশ দেন তার ওপর। সাধারণ প্রশ্নে সাধারণ ফল মিলবে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট, পরিকল্পিত প্রম্পট ব্যবহার করলে আপনি পাবেন বাস্তবভিত্তিক ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি। নিচে এমন ৫টি শক্তিশালী চ্যাটজিপিটি প্রম্পট তুলে ধরা হলো, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি গড়ে তুলতে পারেন আপনার প্রথম সাইড হাসল।
১. লাভজনক নিস (Niche) খুঁজে বের করুন
প্রথম ডলার কামানোর আগে আপনাকে এমন একটি ব্যবসায়িক ধারণা বের করতে হবে যা আপনার দক্ষতা ও বাজার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রম্পটটি দিন এভাবে:
“আমি এমন একটি সাইড হাসল শুরু করতে চাই যা ৬ মাসের মধ্যে মাসে $৩,০০০ আয় করতে পারে। আমার দক্ষতা হলো [আপনার দক্ষতা], আমার আগ্রহ [আপনার আগ্রহ], এবং আমি থাকি [আপনার লোকেশন]। এমন ৫টি সাইড হাসল আইডিয়া দিন যা আমার স্কিল অনুযায়ী, স্থানীয় বাজারে চাহিদাসম্পন্ন এবং $৫০০ এর কম খরচে শুরু করা সম্ভব। প্রতিটি আইডিয়ার জন্য টার্গেট কাস্টমার, প্রাইসিং স্ট্র্যাটেজি এবং শুরু করার প্রথম তিনটি ধাপ দিন। আয় এবং সহজতাসূচক র্যাংকিং দিন।”
কেন কাজ করে: এই প্রম্পটটি আপনার ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপটে ব্যবসার আইডিয়া সাজায়, ফলে আপনি এমন কিছু পাবেন যা আপনার জন্য বাস্তবসম্মত ও কার্যকর।
পরবর্তী ধাপ:
আপনি চাইলে চ্যাটজিপিটিকে বলতে পারেন,
“এই আইডিয়াটির জন্য ৩-৫টি সফল প্রতিযোগী চিহ্নিত করো, তাদের প্রাইসিং, মার্কেটিং ও ইউএসপি ব্যাখ্যা করো।”
এতে আপনি বুঝতে পারবেন কোথায় আপনি ভিন্নতা আনতে পারেন।
২. মার্কেট যাচাই করুন সিস্টেমেটিকভাবে
অধিকাংশ নতুন উদ্যোক্তা ভুল করে শুরুতেই বিশ্বাস করেন, “আমার প্রোডাক্ট সবাই কিনবে।”
এই ভুল এড়াতে চ্যাটজিপিটি দিয়ে বাজার যাচাই করে নিন।
প্রম্পটটি দিন এভাবে:
“[আপনার আইডিয়া] এবং এর টার্গেট অডিয়েন্সকে ঘিরে ৭ দিনের মার্কেট ভ্যালিডেশন প্ল্যান তৈরি করো। এতে থাকবে: ১) কীভাবে ২০ জন সম্ভাব্য কাস্টমার খুঁজে পাব, ২) তাদের কাছে কোন ৫টি প্রশ্ন করে বুঝব সমস্যার ধরন ও মূল্য দিতে তারা প্রস্তুত কিনা, ৩) প্রাইসিং টেস্টের উপায়, ৪) সত্যিকারের আগ্রহ ও ভদ্রতা নির্ভর উত্তর আলাদা করার কৌশল, ৫) সফলতা পরিমাপের মাপকাঠি। পাশাপাশি মেসেজিং ও সার্ভে টেমপ্লেট দাও।”
উন্নত যাচাই কৌশল:
আপনি চাইলে বলুন,
“এই সেবার জন্য একটি ল্যান্ডিং পেজ লিখে দাও যা ইমেইল সংগ্রহ করে আগ্রহ মাপবে।”
তাতে থাকবে: হেডলাইন, ৩টি সুবিধা, সোশ্যাল প্রুফের জায়গা ও CTA।
৩. কনটেন্ট মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করুন
সাইড হাসলে কাস্টমার আনতে হলে দরকার পরিচিতি। চ্যাটজিপিটি দিয়ে তৈরি করে নিন সম্পূর্ণ কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি।
প্রম্পটটি দিন এভাবে:
“[আপনার ব্যবসার ধরন] এর জন্য কনটেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কাজ করো। টার্গেট অডিয়েন্স হলো [বিশেষ শ্রেণি]। ৩০ দিনের কনটেন্ট প্ল্যান তৈরি করো যাতে থাকে: ১) প্রতি সপ্তাহে ৩টি ব্লগ টপিক ও আউটলাইন, ২) প্রতিদিনের Instagram ও LinkedIn পোস্ট ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগসহ, ৩) সপ্তাহিক নিউজলেটার টেমপ্লেট, ৪) ৫টি লিড ম্যাগনেট আইডিয়া, ৫) এমন টপিক যা আপনাকে এক্সপার্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং সেবা প্রোমোট করবে। পাশাপাশি একটি কনটেন্ট ক্যালেন্ডার দাও।”
রিপারপজিং কৌশল:
একটি ব্লগ পোস্টকে বলুন:
“এটি নিয়ে: ১) একটি LinkedIn আর্টিকেল, ২) ৫টি এক্স পোস্ট, ৩) Instagram ক্যারাসেল, ৪) YouTube Shorts বা TikTok ভিডিও স্ক্রিপ্ট বানাও।”
এতে কনটেন্ট একটাই থেকে বহুগুণ রিচ পাওয়া যায়।
৪. সেলস পেজ লিখে ফেলুন চ্যাটজিপিটির সাহায্যে
সফল বিক্রির জন্য দরকার একটা বিশ্বাসযোগ্য ও আকর্ষণীয় সেলস পেজ। এটি নির্ধারণ করে আপনার কাস্টমার কিনবে কি না।
প্রম্পটটি দিন এভাবে:
“[আপনার পণ্য/সেবা]-এর জন্য একটি হাই-কনভার্টিং সেলস পেজ লিখো। এতে থাকবে: ১) চোখ ধাঁধানো হেডলাইন, ২) গ্রাহকের সমস্যা তুলে ধরা শুরু, ৩) সমাধান ও উপকারিতা, ৪) সোশ্যাল প্রুফের জায়গা, ৫) প্রাইসিং ও প্যাকেজ অপশন, ৬) FAQ সেকশন, ৭) তাড়াহুড়োর ও সীমিত অফারের উপাদান, ৮) CTA বোতাম। লেখার ভঙ্গি হবে [পেশাদার/বন্ধুসুলভ/জরুরি] এবং মনস্তাত্ত্বিক ট্রিগার থাকবে।”
ভিন্ন কোণ থেকে দেখুন:
একই পেজ তিনভাবে চাইতে পারেন:
১) সুবিধাভিত্তিক, ২) সমস্যাভিত্তিক, ৩) রূপান্তরমূলক। দেখুন কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
৫. ৯০ দিনের ব্যবসায়িক গ্রোথ প্ল্যান
৩০০০ ডলার মাসিক আয় করতে চাইলে আপনাকে গঠনমূলক প্ল্যান মেনে এগোতে হবে।
প্রম্পটটি দিন এভাবে:
“আমি প্রতি সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা সময় দিতে পারি এবং মাসে $৩০০ বাজেট রয়েছে। শূন্য থেকে $৩,০০০/মাস আয় করতে ৯০ দিনের একটি ব্যবসায়িক প্ল্যান তৈরি করো। প্রতি মাসে সপ্তাহভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করো: ১) কাস্টমার আনার কৌশল, ২) মার্কেটিং ও কনটেন্ট কার্যক্রম, ৩) প্রোডাক্ট ডেলিভারি, ৪) আয় ও খরচ নজরদারি, ৫) সম্ভাব্য বাধা ও বিকল্প পরিকল্পনা। প্রথম দুই সপ্তাহের জন্য দৈনিক কাজের তালিকা ও মূল পারফরম্যান্স সূচক দাও।”
স্কেলিং কৌশল:
যদি আয় $১,৫০০/মাস হয়, তাহলে বলুন:
“আমি কীভাবে $৩,০০০/মাসে পৌঁছাতে পারি কোয়ালিটি ঠিক রেখে? কোন টুল, সিস্টেম বা প্রক্রিয়া লাগবে?”
এতে আপনি অগ্রগতি ধরে রেখে বৃদ্ধি পাবেন।
চ্যাটজিপিটি হতে পারে আপনার ব্যবসায়িক পার্টনার
চ্যাটজিপিটি আপনাকে অপশন দিতে পারে, রোডম্যাপ দেখাতে পারে, কনটেন্ট বানাতে পারে—কিন্তু কাজটা আপনাকেই করতে হবে। সাফল্য আসে ধারাবাহিক চেষ্টায়, নিখুঁত পরিকল্পনায় নয়।
এই ৫টি প্রম্পটের যথাযথ ব্যবহার আপনাকে সত্যিকারের মূল্য তৈরি করতে এবং পেমেন্ট করা কাস্টমার খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
তাই আজই শুরু করুন—চ্যাটজিপিটি দিয়ে গড়ুন আপনার প্রথম সফল সাইড হাসল!
ইমরান