ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

১৫ বছরের পদোন্নতি বঞ্চিতের অভিযোগ

বাংলাদেশ বেতার নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অপতৎপরতা

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০২:২৭, ১৭ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ বেতার নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অপতৎপরতা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ বেতার ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই বেতারেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেসময় থেকে এখনও বেতার বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তবে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনে নানান অনিয়ম, ভিন্ন মতাদর্শের কর্মকর্তাদের পদন্নতি বঞ্চিত করার ঘটনা ঘটে বাংলাদেশ বেতারে। অভিযোগ রয়েছে অনুষ্ঠানের ভিন্নতায়ও ছেদ পড়ার। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেতারের বর্তমান মহাপরিচালকসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে ফ্যাসিবাদের অপতৎপরতা এখনও বেতারের পিছু ছাড়ছেনা- এমনই অভিযোগ তাদের।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশ বেতার। আনা হয়েছে অনুষ্ঠানে ভিন্নতর পরিবর্তন। ৫ আগস্টের পর ভেঙে ফেলা হয় বাংলাদেশ বেতারের প্রধান ভবন ফটকে স্থাপিত শেখ মুবিবুর রহমানের ম্যুরাল। এছাড়াও, রাজধানীর বাইরের আঞ্চলিক সব ভবনগুলো থেকেও ভেঙে ফেলা হয় শেখ মুজিবের ম্যুরাল। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের সময়ে ভেঙে পড়া বেতার প্রশাসনকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসে, অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্য ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এস এম জাহীদ বলেন, ‘বেতারে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নানা ধরনের অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্রোঞ্জ এর মুর্তি (শেখ মুজিবের) আমার নেতৃত্বে ফেলা হয়েছে। আর এই ব্রোঞ্জ এর ওজন হলো ১৫ হাজার কেজি। দেশের বাইরের বেতার বভনগুলোর সামনে থেকেও মুর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের কর্মকতাদের বদলি করায় তারা সংগঠিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন এ এস এম জাহীদ। তিনি ২০০৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যে তাকে প্রেস উইং থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও দলটির অনেক সমর্থকরা বহাল থাকায় বেতারের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করতে জোড় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ভুয়া আইডি ও পেজ খুলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের একটা পক্ষ বাংলাদেশ বেতারে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে বেতারের অন্যান্যা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেটির বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছেন। এমনকি, আওয়ামী লীগের সময়কার সকল বৈষম্যের অবসান চেয়ে রাজপথেও নামেন তারা। এছাড়াও মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চনার অবসান, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতিসহ উপসচিব পদে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, একীভূত বিসিএস (তথ্য) ক্যাডার ও বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব মহাপরিচালকও দাবি করা হয়। 

রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের কারণে বাংলাদেশ বেতারে দীর্ঘ ১৬ বছর পদোন্নতি বঞ্চনা, বদলী সহ আওয়ামী কঠোর নিপীড়নের স্বীকার হন আওয়ামী বিরোধী কর্মকর্তারা। বেতারের সেই আওয়ামী বিরোধী অংশটি বর্তমান সরকারের নীতির প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখিয়ে ডিজির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে বেতারের ডিজি বলেন, ‘ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ার কারণে অনেক কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কোনো পদন্নোতি দেওয়া হয়নি। তারা তো চাইলে অন্য কোনো পেশায় আরো অনেক উপরে উঠে যেতে পারতেন। এমনকি, কর্মকর্তাদের ছুটিও দেওয়া হতো না পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলেও।’

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেতারের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের দেশের বিভন্ন স্থানে বদলি করা হয়। এর মধ্যে একজন হলেন শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব রোমানা শারমিন। তাকে রংপুর বিভাগীয় শহরে বদলি করা হয়। কিন্তু তাকে পুনরায় প্রধান কার্যালয়ে ফেরার জন্য তদবির করে ব্যর্থ হন বরিশালের সাবেক আওয়ামী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর শ্যালক ও আমির হোসেন আমুর ছোট ভাই পরিচয় দেওয়া বেতারের সাবেক উপ-পরিচালক খালিদ মাহমুদ। ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি-পেজে ও ভুঁইফোড় অনলাইনে বেতারের কর্মকতাদের বিরুদ্ধে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি, বেতারের ডিজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের হুমকিও দিয়ে আসছেন। তিনি বরিশালের বেতার কেন্দ্রে কর্মরত থাকলেও কোচিং সেন্টার চালানোরও অভিযোগ রয়েছে। 

এদিকে, গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রংপুরের মেট্রোপলিটন ম্যাজিসট্রেট আমলী আদালতে শেখ হাসিনাসহ ৭০ জনকে আসামি করে মামলা করেন জুলাই যোদ্ধা মো. জসিম মিয়া। যেখানে খালিদ মাহমুদকে ৮নং আসামি করে তার বিরুদ্ধে জুলাই শহিদদের সন্ত্রাসী বলে এবং আন্দোলন ভিন্নখাতে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। 

গত ৫ আগস্টের পর বেতারে কর্মরত তথ‍্য ক‍্যাডারের অফিসারদের সংগঠন বিসিএস তথ‍্য সাধারণ ক‍্যাডার এসোসিয়েশন ও বিসিএস তথ‍্য প্রকৌশল ক‍্যাডার এসোসিয়েশনও পূনর্গঠিত হয়েছে ফ‍্যাসিবাদ বিরোধী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। সাধারণ অংশের আহ্বায়ক অনুষ্ঠান বিভাগের এডিজি আনোয়ার হোসেন মৃধা ও  সদস‍্য সচিব নির্বাচিত হন ২৪তম বিসিএস এর মো. মনির হোসেন। আর প্রকৌশল সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধান প্রকৌশলী মুনির আহমদ ও মহাসচিব প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন।

শহীদ

×