ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই শহীদ দিবসের আলোচনা

অভ্যুত্থানের চেতনায় বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সমবেত প্রয়াস

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১২, ১৭ জুলাই ২০২৫

অভ্যুত্থানের চেতনায় বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সমবেত প্রয়াস

শোকের চাদরে মোড়া জুলাই শহীদ দিবস

বুধবার ছিল শোকের চাদরে মোড়া জুলাই শহীদ দিবস। দিবসটি ্উপলক্ষে এদিন আলোচনাসভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজা। আলোচনায় অংশ নেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদ এবং একাডেমির উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ওয়ালেদুর রহমান খান।

সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই শহীদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জুলাই শহীদ স্মরণে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ। 
ড. মো. সেলিম রেজা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মর্ম চেতনা অনুযায়ী বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের সকলের সমবেত প্রয়াস প্রয়োজন। জুলাই শহ‘ীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে রেখে স্ব স্ব অবস্থান থেকে রক্তরাঙা স্বদেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকাই হোক আজকের দিনের শিক্ষা। অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক প্রায় দুই দশক একটি একার্থক বৈষম্যবাদী সময়-পরিসর পার করেছে। সমাজ ও মানুষের শ^াস নেওয়ার বহুস্বরিক প্রবণতাকে টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। আমরা সবাই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য হাঁসফাঁস করছিলাম।

সমাজ কাঠামোর নানা স্তরে পরিবর্তনের উপাদান বিদ্যমানই ছিল, ছাত্রদের আন্দোলন একে শাণিত করে বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরি করে এবং আবু সাঈদসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতার আত্মদানের বিনিময়ে আমরা বিজয়ী হই। তিনি বলেন, আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর পেরিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে যেন বাংলাদেশের গণমানুষ তার অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বৈষম্যহীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে।

ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদ বলেন, বাংলার মানুষের বঞ্চনা ও বৈষম্যের ইতিহাস একদিনের নয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে আমরা দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছি। স্বাধীন বাংলাদেশেও এই পরিস্থিতির তেমন বদল হয়নি। 
তাই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরও আমাদের গণতন্ত্র নিরাপদ থাকেনি। গত প্রায় দুই দশকের অপশাসনের বিরুদ্ধে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আমরা ছাত্রদের ডাকে পথে নেমেছি এবং নতুন বাংলাদেশের পথ প্রশস্ত করেছি। এখন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই বিজয়কে সংহত ও স্থায়ী করাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। ওয়ালেদুর রহমান খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলাফল নয় বরং দীর্ঘ প্রায় দুই দশক সমাজ ও রাষ্ট্রে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষা ২০২৪-এর জুলাইয়ের মোহনা তৈরি করেছে।

তরুণরা এই আন্দোলনের প্রাণভোমরা। তারা যেভাবে জীবনমরণ তুচ্ছ করে বুলেটের সামনে মাথা পেতে দিয়েছে তার তুলনা মেলা ভার। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থান চিরকাল বাংলাদেশকে পথ দেখাবে। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত প্রায় দুই দশকে এ কাঠামো নতুন মাত্রা লাভ করেছিল।
বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ তার ব্যর্থতার অজ¯্র উদাহরণ তৈরি করেছিল। প্রশাসনকে নগ্নভাবে দলীয়করণ করা হয়েছিল এবং সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার নামে চরম বৈষম্যমূলক ধারা সৃষ্টি করে তারুণ্যের মেধাশক্তিকে অবমাননা করা হয়েছিল। মূলত তরুণদের প্রতিবাদে সারাদেশ প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশকে এক নতুন অধ্যায়ের সামনে উপনীত করেছে। এই অধ্যায়ের রূপকার আবু সাঈদসহ জুলাই শহীদদের অবদান আমাদের সবসময় স্মরণে রাখতে হবে। অনুষ্ঠান শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

প্যানেল হু

×