
ছবি: প্রতীকী
দিনের শুরুটাই যদি হয় ইতিবাচক, তাহলে তার প্রভাব থাকে সারা দিনের উপর। অথচ অনেকেই সকাল ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজটাই করেন ফোন হাতে নেওয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখা। কে কী খাচ্ছে, কোথায় ঘুরছে, কে কী বলেছে – এসব জানার জন্য ঘুমভাঙা চোখে শুরু হয় একটানা স্ক্রল। এই অভ্যাসটা যতটাই সাধারণ, এর প্রভাব ততটাই নেতিবাচক। সকালে মস্তিষ্ক থাকে সবচেয়ে সতেজ, সেদিকে নেতিবাচক বা অপ্রয়োজনীয় তথ্যের বন্যা বইয়ে দিলে দিনটা শুরু হয় দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা দিয়ে। তাই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করুন, কিন্তু নিজের উপকারের জন্য। কীভাবে?
সকালের প্রথম ঘন্টাটি হতে পারে আত্ম-উন্নয়ন ও মানসিক প্রশান্তির সময়। প্রযুক্তি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে আপনি চাইলে দিনের শুরুতে এমন অনেক কিছু করতে পারেন, যা আপনার শরীর ও মনের জন্য উপকারী। ধরুন, ঘুম থেকে উঠে আপনি প্রথমেই মোবাইল হাতে নিয়ে ইউটিউবে একটি ছোট ধ্যানের ভিডিও চালালেন। মাত্র ৫ বা ১০ মিনিটের এই ধ্যানই আপনার মনকে স্থির করতে পারে, মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করতে পারে সারাদিনের কাজের জন্য।
আরও একটি উপকারী প্রযুক্তিগত অভ্যাস হলো জার্নালিং বা সকালে নিজের চিন্তা লিখে ফেলা। মোবাইলে এখন নানা ধরনের নোট অ্যাপ আছে। সেখানে আপনি প্রতিদিন সকালে লিখে রাখতে পারেন, আজ কী করতে চান, কী কী করতে কৃতজ্ঞ বোধ করছেন বা নিজের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করতে পারেন। এসব লিখে রাখলে মন শান্ত থাকে, এবং সারা দিন ফোকাস ধরে রাখা সহজ হয়।
অনেকেই সকালে হালকা ব্যায়াম করতে চান কিন্তু নিয়মিত হতে পারেন না। সেখানে সাহায্য করতে পারে নানা ফিটনেস অ্যাপ বা ইউটিউবের গাইডেড ওয়ার্কআউট ভিডিও। ১০ মিনিটের শরীরচর্চা ভিডিও দেখে নিয়মিত সকালে হালকা ব্যায়াম করা গেলে তা শুধু শরীর নয়, মনকেও চাঙ্গা করে। এসব ভিডিও আপনার স্নায়ুকে সক্রিয় করে, মানসিক অবসাদ কমায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
বই পড়াও হতে পারে সকালে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার। যারা প্রিন্টেড বই পড়তে সময় পান না, তারা চাইলে অডিওবুক অ্যাপ ব্যবহার করে শুনে নিতে পারেন প্রিয় লেখকের লেখা। এমনকি দিনে ১৫ মিনিট অডিওবুক শুনলে বছরে বেশ কয়েকটা বই শেষ করা সম্ভব। এতে জ্ঞান যেমন বাড়ে, তেমনি মানসিক প্রশান্তিও আসে।
তথ্য সংগ্রহের জন্যও প্রযুক্তিকে সকালবেলায় কাজে লাগানো যায়। চাইলে প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট কিছু নির্ভরযোগ্য নিউজ অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে জেনে নেওয়া যায় দেশের এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো। এতে সময়ও নষ্ট হয় না, আবার তথ্যবিভ্রান্তিও কমে।
যারা সৃজনশীল কাজ করেন, তাদের জন্য সকালটা হতে পারে রেকর্ডিং, লেখা, ছবি আঁকা বা নতুন আইডিয়া পরিকল্পনার সময়। মোবাইলের ভয়েস রেকর্ডার চালিয়ে আপনি আপনার ভেতরের ভাবনা ধরে রাখতে পারেন। যারা গান লেখেন বা কবিতা ভাবেন, সকালে হঠাৎ আসা লাইনগুলো ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি আপনাকে সেটা সহজে করতে দেয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ করা। আপনি চাইলে মোবাইলের সেটিংসে গিয়ে সকালে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখতে পারেন। এতে আপনি নিজেই ঠিক করে দিতে পারবেন কোন সময়টুকু নিজের জন্য, আর কোন সময়টা বাইরের জগতের জন্য। সকালে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম খুললেই যে একঘণ্টা চলে যায়, সেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। অথচ ওই একঘণ্টা যদি নিজের স্বাস্থ্য, মন, চিন্তা বা লক্ষ্য নিয়ে ব্যয় করা যায়, তাহলে দিনের গতি সম্পূর্ণ বদলে যায়।
তাই প্রযুক্তি আপনার শত্রু না, যদি আপনি তাকে বন্ধুর মতো ব্যবহার করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রলিং না করে যদি প্রযুক্তিকে কিছু ইতিবাচক কাজের জন্য কাজে লাগানো যায়, তাহলে জীবনের মান বাড়বে, সময়ের অপচয় কমবে। শুধু অভ্যাসটা বদলাতে হবে। ছোট্ট এই পরিবর্তনেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন আরও সচেতন, সংগঠিত এবং আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ।
এম.কে.