ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

অ্যালার্ম বাজানোর আগেই ঘুম ভাঙে? জানুন এর পিছনের বিজ্ঞান

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৩ জুলাই ২০২৫

অ্যালার্ম বাজানোর আগেই ঘুম ভাঙে? জানুন এর পিছনের বিজ্ঞান

সকালে অ্যালার্ম বাজার ঠিক আগমুহূর্তে ঘুম ভেঙে যায় এমন অভিজ্ঞতা কি আপনারও হয়েছে? এমন ঘটনার পর অনেকেই মনে করেন, যেন ঘুমের মধ্যেই সময় বুঝে ফেলার এক বিশেষ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে! কিন্তু বিষয়টি মোটেই অলৌকিক নয়। বরং, বিজ্ঞানসম্মত কারণেই এমনটা ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন-এর ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. আন্দ্রেয়া মাতসুমুরা বলেন, মানুষের শরীর ও মস্তিষ্কে এমন কিছু প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া কাজ করে, যার ফলে অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভাঙতে পারে। তার ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে তিনটি প্রধান কারণ:

১. শরীরের নিজস্ব ঘুম-জাগরণ ঘড়ি

ঘুম যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে হয় এবং ঘুম থেকে উঠে সতেজ অনুভব করেন, তবে বুঝতে হবে আপনার শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ ঠিকঠাক কাজ করছে।

ডা. মাতসুমুরা বলেন, “যদি প্রতিদিন নিয়ম করে সাত ঘণ্টার বেশি ঘুমান এবং ঘুম ভাঙার পর সতেজ থাকেন, তবে আপনার ঘুমচক্র পুরোপুরি সঠিক পথে রয়েছে।”

এই ঘড়ি সূর্যের আলো ও অন্ধকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। সন্ধ্যায় নিঃসৃত হয় মেলাটোনিন, যা শরীরকে ঘুমাতে বলে। আর সকালে সূর্যের আলোয় শরীর পায় জেগে ওঠার সংকেত। তাই সময়মতো ঘুমালে ও ঘুমের রুটিন মেনে চললে, ঘড়ি ছাড়াই ঘুম ভাঙা অস্বাভাবিক নয়।

২. মানসিক চাপের অজানা প্রভাব

পরের দিন গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ, পরীক্ষা কিংবা ভ্রমণ থাকলে মনের ভেতরে অজান্তেই একধরনের চাপ তৈরি হয়। এই চাপ শরীরে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ঘুমের মধ্যেই মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তোলে।

ডা. মাতসুমুরা বলেন, “যদিও আপনি মনে রাখেন না, তবে ঘুমের মাঝে একাধিকবার জেগে ওঠা এই মানসিক চাপের লক্ষণ হতে পারে।”

অতএব, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আগে যদি আপনি বারবার ঘুম ভেঙে যান, সেটা মানসিকভাবে প্রস্তুতির ইঙ্গিত।

৩. মস্তিষ্ক পেয়েছে আপনার ‘নির্দেশনা’

এটি শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, অনেকেই এমনভাবে নিজেদের প্রশিক্ষিত করে ফেলেন, যাতে তারা ঠিক সময়মতো ঘুম থেকে উঠে যান অ্যালার্ম না দিয়েও!

ডা. মাতসুমুরা বলেন, “স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কে ‘ম্যানিফেস্টেশন’ বা ইচ্ছাশক্তির প্রভাব বাস্তবেই কাজ করে।”

এটি একধরনের আত্মবিশ্বাস বা মানসিক অনুশীলন, যেটাকে বলা হয় ‘মনস্তাত্ত্বিক সময় নির্ধারণের ক্ষমতা’। অনেকটা সেই ক্রীড়াবিদদের মতো, যারা প্রতিযোগিতার আগে সাফল্যের কল্পনা করে নেন।

যদি প্রতিদিন সময়মতো ঘুম ভাঙে এবং আপনি ক্লান্ত বোধ না করেন, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং আপনি নিজের শরীরকে এক চমৎকার ছন্দে চালাতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে যদি ঘন ঘন ঘুম ভাঙা, উদ্বেগ, কিংবা সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করা, মোবাইল স্ক্রিন কম দেখা এবং ঘুমের পরিবেশ আরামদায়ক করা জরুরি।

আর হ্যাঁ, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনের মধ্যে বলুন, “আমি সকাল ৭টায় উঠব।” কিন্তু অ্যালার্ম চালু রাখতে ভুলবেন না শেষমেশ, নিরাপত্তা চাই-ই!

মিমিয়া

×