ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

যতই ব্যস্ত থাকুন, এই ৫টি সহজ অভ্যাসেই সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকবে!

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫০, ৩ জুলাই ২০২৫

যতই ব্যস্ত থাকুন, এই ৫টি সহজ অভ্যাসেই সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকবে!

ছবি: সংগৃহীত

জীবন বড়ই ব্যস্ত। কাজের সময়সীমা জমতে থাকে, দায়িত্বের ভার সময়ের চেয়ে বেশি হয়, আর ক্লান্তি যেন প্রতিদিনের সঙ্গী। কিন্তু এই দৌড়ঝাঁপের মাঝেও শিশুর ছোট্ট জগতটা চুপচাপ অপেক্ষা করে।
অনেকে মনে করেন, সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো মানেই বড় ছুটি বা উইকেন্ড ভ্রমণ।
কিন্তু সত্যি কথা হলো, শিশুরা সবসময় বড় আয়োজন চায় না। তারা মনে রাখে ছোট ছোট মুহূর্তগুলো—রাতের দেরি করে হাসাহাসি, হাতে লেখা ছোট চিরকুট, রান্নাঘরে হঠাৎ নাচের উৎসব।

এখানে এমন ৫টি সহজ উপায় দেওয়া হলো, যা ব্যস্ত বাবা-মায়েরাও খুব সহজেই অনুসরণ করতে পারেন। এগুলো শুধু সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল নয়, বরং এগুলো এমন ছোট ছোট জানালা, যার মধ্য দিয়ে শিশুর শৈশবের অমূল্য স্মৃতি তৈরি হয়।

দৈনন্দিন কাজগুলোকে পরিণত করুন মজার রীতিতে

সময় বের করা মানেই আলাদা করে ঘড়ির কাঁটা হাতে বসা নয়। সময় কখনো পাওয়া যায় না; অনেক সময় সেটাকে তৈরি করতে হয় যেসব কাজ আমরা প্রতিদিন করিই।

দাঁত ব্রাশ করা, স্কুলে নামিয়ে দেওয়া, রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি—এসব কাজ আমরা সাধারণত তাড়াহুড়ো করে করি। কিন্তু যদি এগুলোই পরিণত হয় খেলায়? দাঁত ব্রাশের সময় কোনো মজার গান বানিয়ে গাওয়া, কিংবা স্কুল বাসের দিকে হাঁটার পথে ছোট্ট "ধরো-খুঁজো খেলা"—যেখানে ৫টি জিনিস খুঁজে বের করতে হবে।

এই ছোট্ট রীতিগুলো প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলোকে রূপ দেয় একান্তই বাবা-মা আর সন্তানের ব্যক্তিগত আনন্দঘন মুহূর্তে। সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো—এগুলোতে সময় আলাদা করে লাগে না, শুধু একটু মনোযোগ আর সৃষ্টিশীলতা হলেই হয়।

প্রতিদিন মাত্র দুই মিনিটের ছোট্ট রীতি তৈরি করুন

অনেকেই ভাবেন, গভীর বন্ধন গড়ে তুলতে দীর্ঘ সময় দরকার। কিন্তু কোনো রীতি, যত ছোটই হোক, তার মানসিক প্রভাব অনেক গভীর হতে পারে।

প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র দুই মিনিটের এক ছোট্ট রীতি—হতে পারে সারাদিনের সবচেয়ে ভালো ও খারাপ বিষয় ভাগ করে নেওয়া, বা একটা মজার হ্যান্ডশেক, কিংবা একটা ছবির খসড়া আঁকা একসঙ্গে রাখা খাতায়। এটি ব্যক্তিগত, পূর্বনির্ধারিত, আর খুব শক্তিশালী এক অভ্যাস।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শিশুরা নিয়মিততা পছন্দ করে। এই ছোট্ট রীতি তাদের মনে নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে, যা তারা প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতীক্ষা করে। নিয়মিত করলে, এটি হয়ে ওঠে মানসিক শক্তির এক আস্থা জাগানো ভরসা।

শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও ভয়েস নোট পাঠিয়ে পাশে থাকার অনুভূতি দিন

অনেক সময় আমরা ভাবি, সন্তানকে সময় দেওয়া মানে সরাসরি তাদের পাশে থাকা। কিন্তু মানসিকভাবে উপস্থিত থাকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি আপনি কোনো মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন বা লম্বা পথে যান, তবে লাঞ্চ ব্রেক বা কোনো কাজ শেষে সন্তানকে ছোট্ট একটা ভয়েস নোট পাঠান। যেমন—“এইমাত্র আমাদের পছন্দের সেই বেকারির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তোমার কথা মনে পড়ল।” এতেই সন্তানের মনে হয়, বাবা-মা তাদের কথা ভাবছেন, যদিও শরীরের দূরত্ব আছে।

টেক্সট বার্তার তুলনায় ভয়েস নোটে থাকে উষ্ণতা, আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা। শিশুদের জন্য দিনের মধ্যে বাবার বা মায়ের কণ্ঠস্বর শোনা এক ধরনের আশ্বাস। এতে তারা বুঝতে পারে, তারা বাবা-মায়ের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

সপ্তাহে অন্তত একদিন কোনো একটিকে করুন "শিশু সময়ের" কাজ

সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো মানে কাজ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং কোনো কাজকে একসঙ্গে করার মাধ্যমে সময় কাটানো হতে পারে খুবই আনন্দময়।

প্রতিটি সপ্তাহে অন্তত একটি কাজ বেছে নিন, যা সন্তানের সঙ্গে করতে পারেন—হোক তা সহজ কোনো রাতের খাবার তৈরি, কাপড় ভাঁজ করা, কিংবা গাছে পানি দেওয়া। তবে এটাকে কাজ মনে না করে, বানিয়ে তুলুন আনন্দময় অভিজ্ঞতা। যেমন—প্রিয় গান চালিয়ে দেওয়া, মজার চ্যালেঞ্জ দেওয়া (কে বেশি দ্রুত কাপড় ভাঁজ করতে পারে), কিংবা রান্নার সময় গল্প বলা।

মূল কথা হলো, সন্তান যেন মনে করে তারাও বাবা-মায়ের জগতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, সম্পর্কের বন্ধনও গভীর হয়।

দিনে অন্তত একবার শিশুকে "নিয়ম ভেঙে" আপনার সময় নেওয়ার সুযোগ দিন

ব্যস্ত জীবনে নিয়ম মেনে চলা দরকার। তবে মাঝে মাঝে সেই নিয়ম ভাঙাও ভালোবাসার এক বিশেষ প্রকাশ।

ভাবুন, প্রতিদিন একবার আপনার সন্তানকে সুযোগ দিলেন, তারা যেকোনো সময় আপনাকে “বাধা” দিতে পারবে—হোক সেটা ফোনকল, মিটিং, বা রান্নার সময়। এই পাঁচ মিনিটে যা খুশি করতে পারে—গল্প বলা, আঁকা দেখানো, কোনো প্রশ্ন করা বা কেবল জড়িয়ে ধরা।

এই সামান্য স্বাধীনতা শিশুকে মনে করায়, তারা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য সারা পৃথিবী কয়েক মিনিটের জন্য হলেও থেমে যায়। মুহূর্তটা ছোট হলেও, এতে যে বার্তা পৌঁছে যায়, তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি—“তুমি সবসময় আমার কাছে অগ্রাধিকার।”

আবির

×