
জঘন্য মনোবৃত্তিতে ধর্ষিতার ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দুর্বৃত্ত নিজেই তার এমন কুকীর্তি ছড়িয়ে দেয় বলে জানা যায়। সভ্যতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম। বলা হচ্ছে নারী নির্যাতন ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ক্ষতচিহ্নই শুধু নয় বরং অসভ্য বন্য আর বর্বর যুগের নবতর আস্ফালনও যেন। সত্যিই অমার্জনীয় এমন অপকর্ম ক্ষমার অযোগ্য। সংঘবদ্ধ একটি অশুভ চক্র এমন অপরাধ করেও ক্ষান্ত হয়নি। আরও পৈশাচিক তাড়নায় আপন কুকীর্তি জাহির করে নিজেকে বন্যপশুর কাতারে নিয়ে যায়। মানা কিংবা ভাবা কোনোটাই সংগত নয়। তারপরও ঘটে যাচ্ছে এমন আদিমযুগের পশুবৃত্তির চরম দাবানল। সম্মান, মর্যাদা, সম্ভ্রম যে কোনো নারীর অলঙ্কারই নয় বরং মানুষ হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতাকেও অভিষিক্ত করে। নারী মাতৃরূপের অনন্য এক আধার। যার তুলনা সমসংখ্যক নিজেই। পরিবার থেকে পুরো সামাজিক অঙ্গন লজ্জায়, বেদনায়, নির্মমতায় অধোবদন হয়। নৃশংসতার এমন কঠিন আঁচড় মানুষ নয় হিংস্র দানবের পক্ষেই সম্ভব। রাষ্ট্র শক্তি, মানবিক মূল্যবোধ আর মনুষ্যত্বের পরম বারতা শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয় বরং পৈশাচিক বর্বর যাতনার চরম ধিক্কৃত এক অশুভ শক্তিও বটে। এমন পৈশাচিক নির্মমতার বিচার যদি কোনো কারণে দীর্ঘসূত্রতার জালে আটকা পড়ে তাহলে দেশের কোনো নারীর নিরাপত্তার বেষ্টনী সুরক্ষিত থাকতে অসম্ভবের পর্যায়ে ঠেকবে। এমনিতে সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীনতায় কত দুর্ভোগ, দুর্যোগ পোহাতে হয় লাঞ্ছিতদের সেটাও সভ্যসমাজকে আরও বিপন্নতার জালে আটকে দেয়। কতবার প্রশ্ন উঠেছে- নারীরা আসলে কোথায় নিরাপদ? নিজ পারিবারিক আঙিনায়? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে? রাস্তাঘাটে? তার যেমন সদুত্তর কখনো মেলেনি। তেমনি নির্যাতন, নিপীড়ন বহাল তবিয়তে সভ্যসমাজের আনাচে-কানাচে ভর করে আছে। পরিত্রাণের সহজ স্বাভাবিক কোনো পথও খোলা নেই। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আজ পর্যন্ত তেমন কোনো বিচার সম্পন্ন করতে পারেননি। একমাত্র আদুরি হত্যার বিচার ছাড়া। যার কারণে অত্যাচারী, পাষাণ্ডরা নির্ভীকচিত্তে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সব দোষ চাপায় অসহায় ও নিপীড়িত, লাঞ্ছিত নারীটির ওপর। এমন সামাজিক অপসংস্কার কাঠামোর অভ্যন্তরে জিইয়ে থাকে। যার মূল্যেৎপাটন আসলেই সম্ভব কিনা তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। অসম্ভবের কাঠখড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিতে হবে। একজন নারীর এমন নৃশংস বীভৎস দৃশ্যের সত্য কথন বয়ানে মাথা নত হয়ে আসে। কবির ভাষায়-
যার ভয়ে তুমি ভীত
সে তোমার চেয়েও ভীরু।
শুধু কি সেøাক? একদম নয়। অপরাধীরা আসলে দুঃসাহসী হয়ই না- দুর্বৃত্ত হয়। তাই দুর্বৃত্তায়নের অবসানে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক সাজাই শুধু নয়-দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যথাসম্ভব কম কার্যদিবসে নিষ্পত্তি করা পরিস্থিতির ন্যায্যতা। সভ্যতা সূর্য যখন মধ্যগগনে তখন আদিম ও বর্বর যুগের পৈশাচিক উন্মাদনা দেশ ও জাতির জন্য চরম স্খলন আর মানুষের মর্যাদায় নারীকে স্থান না দেওয়ারও কঠিনতর দুর্ভোগ। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা বিক্ষোভ মিছিলের কোনো সমাধান নয়। সরাসরি আদালত চত্বরে দ্রুততম সময়ে জঘন্য অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি শুধু দাবিই নয় কার্যকরী সমাধানও দ্রুততার সঙ্গে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
অপরাজিতা প্রতিবেদক
প্যানেল