
ক্লান্তি দূর করতে বা কাজের মাঝে নিজেকে সতেজ রাখতে অনেকেই এক কাপ কফির সাহায্য নেন। আর কফি পান করার কিছুক্ষণ পরই শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে, ঘুম উধাও হয়—এই অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় সবারই আছে। কিন্তু ক্যাফেইন নামক উপাদানটি কীভাবে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ঘুম তাড়িয়ে দেয়, এর পেছনের সহজ বিজ্ঞান কী?
ক্যাফেইন যেভাবে কাজ করে:
কফি পান করলে ঘুম কেটে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো এতে থাকা ক্যাফেইন (Caffeine) নামক একটি উত্তেজক উপাদান। ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কে একটি বিশেষ উপায়ে কাজ করে:
অ্যা adenosine ব্লক করা: আমাদের মস্তিষ্কে অ্যা adenosine নামক একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক থাকে, যা আমাদের ক্লান্তি এবং ঘুম ঘুম ভাব তৈরি করে। যখন অ্যা adenosine মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরগুলোর (receptor) সাথে যুক্ত হয়, তখন আমরা ক্লান্ত অনুভব করি। ক্যাফেইনের আণবিক গঠন অ্যা adenosine-এর সাথে অনেকটাই মিলে যায়। কফি পান করার পর ক্যাফেইন এই অ্যাডেনোসিনের সাথে প্রতিযোগিতা করে এবং সেই রিসেপ্টরগুলো দখল করে নেয়।
ফলে যা ঘটে: যেহেতু ক্যাফেইন অ্যাডেনোসিনের রিসেপ্টরগুলো দখল করে রাখে, তাই অ্যাডেনোসিন তার কাজ করতে পারে না। এর ফলস্বরূপ, আমাদের মস্তিষ্ক "সতর্ক" অবস্থায় থাকে এবং আমরা ঘুমের অনুভূতি পাই না। একই সাথে, ক্যাফেইনের প্রভাবে হার্টবিট কিছুটা বাড়ে এবং শরীরে এনার্জি বা কর্মশক্তি বেশি অনুভূত হয়।
ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ানো: ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক এক ধরনের 'ফিল-গুড' (feel-good) কেমিক্যালের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। এটি মনকে আরও সতেজ, আনন্দিত এবং ফুরফুরে করে তুলতে সাহায্য করে।
কফির প্রভাব কতক্ষণ থাকে?
সাধারণত এক কাপ কফির ক্যাফেইনের প্রভাব ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত আমাদের শরীরে থাকতে পারে। তবে, প্রতিটি মানুষের শরীরের গঠন এবং ক্যাফেইনকে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা ভিন্ন হওয়ায়, কারো কারো ক্ষেত্রে এর প্রভাব দ্রুত শেষ হয়, আবার কারো ক্ষেত্রে দেরিতে শেষ হতে পারে।
তবে সাবধান!
কফি উদ্দীপক হিসেবে খুব ভালো কাজ করলেও, এর কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি:
রাতে ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে কফি পান করলে স্বাভাবিক ঘুমের চক্র ব্যাহত হতে পারে এবং ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে তা স্নায়ুতন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে অস্থিরতা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
পরিমিত পরিমাণে কফি পান করলে তা আমাদের কর্মক্ষমতা এবং সতেজতা বাড়াতে সাহায্য করে, আর এর পেছনের বিজ্ঞান অনেকটাই অ্যাডেনোসিনকে সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় রাখার মধ্যেই নিহিত।
রাজু