
আইনের ভারসাম্য এবং ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২৭ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করেছে। এমনকি এদের মধ্যে একজনকে দুইবার ক্ষমা করা হয়েছে।
সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ পর্যালোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি দণ্ডপ্রাপ্ত এমনকি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও সরকারের অনুরোধে ক্ষমা করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকেও চাইলে সরকারের অনুরোধে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিতে পারেন। এবং আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে এমন ২৭ জন দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে এবং একজনকে দুইবার ক্ষমা করা হয়েছে।”
আইনের ভারসাম্য প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদ প্রশ্ন তোলেন, “একটা রাষ্ট্র গঠন করবার জন্য যে আইনের ভারসাম্য দরকার, যে সুশাসন দরকার, আইনের শাসনের কথা আমরা বলছি এইটা ন্যায্য কিনা এমন একটা ধারা সংবিধানে থাকা।”
তিনি বলেন, “যেই সংবিধান বলছে খুন করলে আপনি বিচার পাবেন, ইনসাফ পাবেন, এটা আপনার অধিকার, আপনি কোর্টের কাছে যেতে পারবেন। কিন্তু সবকিছু করবার পরে রাষ্ট্রপতি যদি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৪৮(৩) ধারার পরামর্শে একজন খুনের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে মাফ করে দেন, তাহলে আমরা কি এমন রাষ্ট্র চাই? যে রাষ্ট্রে খুনের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরাও খালাস পেতে পারেন?”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাংলাদেশের যেকোন আদালত, ট্রাইবুনাল বা বিচারিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত, দণ্ড, সাজা মৌকুফ করার ক্ষমতা দেয়। এই ক্ষমতা থাকা উচিত কিনা, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।”
ব্যক্তিগত অপরাধে রাষ্ট্রের ক্ষমা করার এখতিয়ার থাকা উচিত নয় বলে মত দেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ। তিনি বলেন, “ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির যে ফৌজদারী অপরাধ যেমন আমি কাউকে খুন করলাম তখন তৃতীয় একজন ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতি, যিনি এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নন, তার মাফ করার অধিকার থাকা উচিত কি না, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।”
তিনি বলেন, “যিনি খুন হয়েছেন, তার পরিবার যদি খুনিকে মাফ করতে চান, তবে সেই মাফ করার একটি প্রভিশন থাকতে পারে। কিন্তু সেটি পারিবারিক এঙ্গেজমেন্টের মাধ্যমে হতে হবে, রাষ্ট্রের একক সিদ্ধান্তে নয়।”
ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরও বলেন, “এই প্রসঙ্গে আরও ভয়ংকর বাস্তবতা হচ্ছে, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যারা কমান্ড স্ট্রাকচারে ছিলেন আর্মড ফোর্সেস, র্যাব, পুলিশের যেসব কর্মকর্তা শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারা কি ভবিষ্যতে আবার ক্ষমা পেয়ে শহীদের রক্ত পেরিয়ে খুনির মায়ের সঙ্গে বসবেন? দেখা করবেন?”
এই আশঙ্কাকে ঘিরে তিনি দুটি প্রস্তাবনা দেন। প্রথমত, ব্যক্তিগত অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ক্ষমা করার অধিকার থাকা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, খুনের ঘটনার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পরিবারের ইচ্ছার ভিত্তিতে মাফ করার সুযোগ রাখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, “আজকের কমিশনের মিটিংয়েও আমরা এই প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির ফৌজদারী অপরাধে রাষ্ট্র যেন মাফ না করে। পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতে সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা থাকলেও তা সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে থাকবে না।”
সূত্র:https://tinyurl.com/3cp3tr4t
আফরোজা