
ছবিঃ সংগৃহীত
"দাঁতের ব্যথা থাক, হার্ট অ্যাটাকের ভয় কেন?"
এই প্রশ্নটা অনেকের মাথায় আসতেই পারে। দাঁতের ভিতরটা যদি পচে যায় বা ইনফেকশন হয়, তখন ডেন্টিস্টরা যে চিকিৎসা করেন, তার নাম রুট ক্যানাল। কিন্তু সম্প্রতি একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—এই রুট ক্যানাল কি হৃদরোগের কারণ হতে পারে?
চলুন, এই ব্যাপারে সত্য-মিথ্যে পরিষ্কার করি, একদম সহজ কথায়।
দাঁতের ইনফেকশন হার্টে পৌঁছায় কীভাবে?
আমাদের মুখের ভিতর হাজারো জীবাণু থাকে। যদি দাঁত বা মাড়ির ইনফেকশন ঠিকমতো চিকিৎসা না হয়, তাহলে সেই জীবাণু রক্তের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে—এমনকি হার্টেও।
এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, Porphyromonas endodontalis, যেটা দাঁতের ভিতর থেকে রক্তে গিয়ে হার্টে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রদাহ ধীরে ধীরে রক্তনালিতে চর্বি জমতে সাহায্য করে, যাকে বলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস—এটাই হার্ট অ্যাটাকের মূল পথ।
দীর্ঘদিনের ইনফেকশন মানেই বিপদ
রুট ক্যানালের ইনফেকশন যদি মাসের পর মাস ঠিক না হয়, তাহলে সেই প্রদাহ শরীরের রক্তনালিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর এক সময় গিয়ে হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই—এগুলো রাতারাতি ঘটে না। অনেক সময় ধরে অবহেলা করলে তবেই সমস্যা হয়।
কিন্তু রুট ক্যানাল কি নিজেই খারাপ?
না, একেবারেই না! রুট ক্যানাল চিকিৎসা ঠিকঠাকভাবে করালে, এটা দাঁতের ইনফেকশন দূর করে। বরং ইনফেকশন রাখা বা চিকিৎসা না করাটাই ঝুঁকির।
যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা আছে বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য শুধু একটু বাড়তি সতর্কতা দরকার।
স্বাভাবিক, সুস্থ মানুষের জন্য রুট ক্যানাল একেবারেই নিরাপদ।
তাহলে কী করা উচিত?
- দাঁতে ব্যথা বা ইনফেকশন হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান
- নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিন—দিনে ২ বার ব্রাশ, ফ্লস
- রুট ক্যানাল হলে ভয় না পেয়ে ভাল ডেন্টিস্টের পরামর্শে করান
- হার্টের সমস্যা থাকলে ডেন্টিস্টকে আগে জানিয়ে রাখুন
জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে ৫টা বড় ভুল, আর সেগুলোর সত্যি কথা
বয়স হলে হাঁটু বা কোমরের ব্যথা অনেকেই সহ্য করেন বছরের পর বছর। কিন্তু যখন ডাক্তার বলে "জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট দরকার", তখন ভয় পেয়ে যান অনেকেই।
ভয়টা স্বাভাবিক—কিন্তু সত্যিটা জানা জরুরি।
ভুল ১: “আমি তো এখনও অনেক তরুণ, আমার রিপ্লেসমেন্ট লাগবে কেন?”
সত্যি: বয়স নয়, ব্যথা আর দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধাই বড় ব্যাপার। ৪০ বা ৫০-এ যদি হাঁটতে, বসতে বা ঘুমোতে কষ্ট হয়, তাহলে সময়মতো সার্জারি করানো বুদ্ধিমানের কাজ।
ভুল ২: “নতুন জয়েন্ট তো প্লাস্টিক বা ধাতু, কেমন করে স্বাভাবিক লাগবে?”
সত্যি: আজকের প্রযুক্তিতে, বিশেষ করে রোবোটিক সার্জারি, জয়েন্ট এমনভাবে বসানো হয় যাতে সেটা আপনার শরীরের গঠন অনুযায়ী একেবারে ‘নেচারাল’ ফিল দেয়। অনেক রোগী বলেন—"মনে হয় নিজেরটাই ফিরে পেয়েছি!"
ভুল ৩: “সার্জারির পর তো বিছানায় পড়ে থাকতে হবে!”
সত্যি: এখন বেশিরভাগ মানুষ সার্জারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হাঁটেন! ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই দৈনন্দিন কাজ শুরু করা যায়। ফিজিওথেরাপি থাকলেও সেটা আপনার শরীরের সেরা ভার্সন ফিরিয়ে আনে।
ভুল ৪: “ইমপ্লান্ট ১০ বছরে নষ্ট হয়ে যাবে”
সত্যি: পুরনো দিনের ইমপ্লান্ট হয়তো ততটা টেকসই ছিল না। কিন্তু এখনকার উন্নত ম্যাটেরিয়াল ও টেকনোলজি দিয়ে ২০-২৫ বছর বা তারও বেশি চলতে পারে—যদি আপনি যত্ন নেন।
ভুল ৫: “শেষ পর্যন্ত সার্জারি করতে হল, মানে ব্যর্থতা”
সত্যি: সার্জারি মানে আপনি হেরে যাননি, বরং জীবনের দিকে ফিরে তাকাচ্ছেন। হাঁটতে, খেলতে, ঘুরতে বা নাতি-নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারা—এটাই তো আসল জয়!
শেষ কথা
দাঁতের ইনফেকশন বা জয়েন্টের ব্যথা—এই ছোট ছোট সমস্যা গড়িয়ে বড় ঝুঁকি হয়ে ওঠে, যদি আমরা অজুহাত দিয়ে কাটিয়ে দিই।
তাই ভয় নয়, সচেতনতা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
সুস্থ থাকুন, হাসিমুখে চলুন!
মারিয়া