ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

তানজিল জামান জয়

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:২১, ৪ জুলাই ২০২৫

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প। সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (PPP) গঠিত এই কেন্দ্রটি ইতোমধ্যে ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশের বিদ্যুৎ খাতে এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এই প্রকল্পকে ঘিরে আশাবাদের পাশাপাশি উদ্বেগের ছায়াও ক্রমে ঘন হচ্ছে।

আশীর্বাদ—অর্থনীতি ও অবকাঠামোর গতি

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র একদিকে জাতীয় গ্রিডে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, অন্যদিকে এটি দক্ষিণাঞ্চলের অবহেলিত অঞ্চলে কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করেছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা: গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ায় শিল্প ও গৃহস্থালির ব্যবহারকারীরা স্বস্তি পাচ্ছেন।

অর্থনৈতিক গতি: স্থানীয় পর্যায়ে হোটেল, দোকান, পরিবহনসহ নানা সেবা খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে।

যোগাযোগ অবকাঠামো: পায়রা কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে সড়ক ও বন্দর উন্নয়ন হয়েছে, যা দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক।

অভিশাপ—পরিবেশ ও মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব

উন্নয়নের এই ধারার বিপরীতে, প্রকল্পের পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি: কয়লাভিত্তিক এই কেন্দ্র থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক বর্জ্য নদী ও পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

জীববৈচিত্র্যের হুমকি: আন্ধারমানিক নদী ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি: বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, ত্বক রোগসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জীবিকা হারানো: অনেক জেলে ও কৃষক জমি হারিয়েছেন বা তাদের পূর্ববর্তী জীবিকায় ফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভারসাম্য প্রয়োজন

উন্নয়ন ও পরিবেশের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা বর্তমান সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিঃসন্দেহে জাতীয় উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই উন্নয়ন যেন মানবিক ও পরিবেশবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার ও নিয়মিত পরিবেশগত নিরীক্ষা জরুরি।

ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণ পুনর্বাসন ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়ার কৌশল এখনই গ্রহণ করা উচিত।

উপসংহার

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আশীর্বাদ কি না, তা নির্ভর করছে আমাদের নীতিনির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার উপর। যদি আমরা সঠিকভাবে পরিবেশ রক্ষা ও মানবিক দায়িত্ব পালন করতে পারি, তবে এই প্রকল্প জাতির জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। অন্যথায়, এটি হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক জ্বলন্ত অভিশাপ।

লেখকঃ তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

নোভা

×