ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

তারেক রহমান দেশে ফিরলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে -আশা জনগণের 

আফ্রিদি আহাম্মেদ

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৪ জুলাই ২০২৫

তারেক রহমান দেশে ফিরলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে -আশা জনগণের 

ছবি: তারেক রহমান

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নানা দিক থেকে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তিতে ঘেরা। বিশেষ করে বিএনপি কেন্দ্রিক রাজনীতি এখন অতীতের মতো সংগঠিত ও সক্রিয় নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। মাঠপর্যায়ের সংগঠনগুলোতে বিশৃঙ্খলা, বিভক্তি ও অনৈক্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসবের মাঝে বিএনপি'র বর্তমান অবস্থা নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলাতেই নানা গুঞ্জন ও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

নামধারী অনেক ‘বিএনপি নেতা-কর্মী’ আজ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও নানা প্রকার অসামাজিক-অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। দলীয় আদর্শ কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য। আবার অনেক আওয়ামী লীগের লোক বিএনপি নেতার ছায়ায় গিয়ে নিজেদের পুনর্বাসন ঘটিয়ে নিচ্ছে—কেউ ব্যবসা বাঁচাতে, কেউ মামলা থেকে বাঁচতে, কেউ আবার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই এমন পথ বেছে নিচ্ছে।

প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে

এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। প্রশাসনের শিথিলতা, দায়িত্বহীনতা ও আইন প্রয়োগে পক্ষপাতিত্ব মূলত অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক পরিচয়ে যারা অপরাধ করছে, তাদের শাস্তির মুখোমুখি হওয়া দূরের কথা, তারা আরও দাপটের সঙ্গে অন্ধকার জগতের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে আজ যে অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে তার মূল কারণ একটি শক্তিশালী ও নৈতিক নেতৃত্বের অভাব।

এমনকি গেলো ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে সংঘটিত প্রায় প্রতিটি আলোচিত অপকর্মেই কোনো না কোনোভাবে বিএনপি’র নেতা বা কর্মীর নাম জড়িয়ে পড়ছে। যদিও এসব অভিযোগের অনেকগুলো প্রমাণহীন, তথাপি এতে সাধারণ জনগণের মনোজগতে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জন্ম নিচ্ছে। ফলাফল—ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রত্যাশা ও আস্থা

এই সঙ্কটজনক ও বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেকে আশার আলো খুঁজছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই ভার্চুয়ালি দলের কার্যক্রম পরিচালনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। সভা-সেমিনার, সংগঠনের পুনর্গঠন, যুবদল-ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন—সবই চলছে তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।

তবে প্রশ্ন হলো, তাঁর নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে কতটা কার্যকরভাবে পৌঁছাচ্ছে? বাস্তবতা হলো, অনেক ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তিনি বারবারই বলে আসছেন, “ব্যক্তির অপকর্মের দায়ভার দল নেবে না।” কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত মাঠপর্যায়ের কারণে এ বার্তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, বরং তার উল্টো চিত্র উঠে আসছে অনেকাংশে।

তরুণ সমাজের আস্থা ও প্রত্যাশা

বিএনপির প্রতি তরুণ সমাজের আগ্রহ অনেকাংশেই কেন্দ্রীভূত রয়েছে তারেক রহমানকে ঘিরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য, উপস্থাপনা এবং আত্মবিশ্বাসপূর্ণ নেতৃত্ব তরুণদের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়িয়েছে। একাধিক তরুণ মন্তব্য করেছেন, “যদি তারেক রহমান দেশে ফিরতেন, তাহলে রাজনীতি বিমুখ তরুণরাও অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হতো। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি আবার তরুণদের দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারতো।”

সুশীল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

সুশীল সমাজের বিশিষ্টজনরাও মনে করেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে বিএনপি নাম ভাঙিয়ে যারা চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। এতে যেমন দলের ভাবমূর্তি রক্ষা পেত, তেমনি রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান আরও বেগবান হতো।

তাঁদের মতে, দেশের রাজনীতিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ শক্তির দরকার আছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের একক আধিপত্যের কারণে গণতন্ত্রের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারেক রহমান দেশে ফিরলে তা কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে বলে তাঁদের অভিমত।

দলের ভেতরের প্রত্যাশা

বিএনপির অনেক তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও চান তারেক রহমান দেশে ফিরুক এবং সরাসরি নেতৃত্ব গ্রহণ করুক। তাঁদের কথা, “দূর থেকে নির্দেশনা যথেষ্ট নয়। একজন নেতাকে কর্মীদের পাশে থাকতে হয়, মাঠে থাকতে হয়। তারেক রহমান যদি দেশে থাকতেন, তাহলে দল সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী ও সক্রিয় থাকতো।”

জন আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের পথচলা

সর্বোপরি, দলমত নির্বিশেষে দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী মনে করে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু বিএনপির জন্যই নয়, দেশের রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর প্রত্যাবর্তন যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে হয়তো বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের সরাসরি উপস্থিতি রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ও কাঠামোগত পুনর্গঠন ঘটাতে পারে।

এখন প্রশ্ন, তারেক রহমান আদৌ দেশে ফিরবেন কি? ফিরলে কবে? —এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই অপেক্ষা করছে কোটি মানুষের চোখ।

লেখকঃ আফ্রিদি আহাম্মেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ

নোভা

×