ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

শিক্ষার্থীর কণ্ঠরোধ নয়, মুক্ত চিন্তার পথ উন্মুক্ত হোক

আবু রায়হান

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:০৬, ৪ জুলাই ২০২৫

শিক্ষার্থীর কণ্ঠরোধ নয়, মুক্ত চিন্তার পথ উন্মুক্ত হোক

ছবি: সংগৃহীত

ইডেন কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি আদেশ জারি হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সংবাদ কিংবা তথ্য সংবাদমাধ্যমে পাঠানো যাবে না। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা মনে হলেও, বাস্তবে এটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত।

একজন অধ্যক্ষ যখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ রোধ করতে চান, তখন তা শুধু প্রশাসনিক দমননীতিই নয়, বরং এটি গণতন্ত্রের বুকে গোঁজামিল দেওয়ার নামান্তর। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রের। তার চেয়েও বড় কথা এটি একটি চিন্তাশীল, সচেতন প্রজন্ম গঠনের কেন্দ্রভূমি। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ মানে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে গলাটিপে হত্যা করা।

ইডেন কলেজের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ভয়ংকর এক নজির তৈরি করল। শিক্ষার্থীদের সংবাদমাধ্যমে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে তাদের অভিজ্ঞতা, মত, প্রতিবাদ ও প্রত্যাশা প্রকাশের পথ বন্ধ করে দেওয়া। অথচ যে সমাজে প্রশ্ন নেই, প্রতিক্রিয়া নেই, প্রতিবাদ নেই সেই সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।

বলা দরকার, স্বাধীন সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি। আর শিক্ষার্থী সাংবাদিকতা হলো সেই ভিত্তির প্রাথমিক অনুশীলন। যখন কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজ প্রতিষ্ঠানের তথ্য বাইরে না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তখন তা প্রমাণ করে তারা সত্য গোপন করতে চায়। তারা চায় না শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ সমাজের দরবারে পৌঁছাক। এই গোপননীতি, এই নিপীড়ন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছু নয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ গ্রহণ করে না, তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হয়। গণমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ তাদের সেই চেতনারই একটি অংশ। শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিয়ে যদি মনে করা হয় শিক্ষাব্যবস্থা সুশৃঙ্খল থাকবে তা সবচেয়ে বড় ভুল।

এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি কলেজের সীমায় আটকে নেই। এটি সারাদেশে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধের একটি পূর্বাভাস। এখন যদি এর প্রতিবাদ না করা হয়, আগামী দিনে আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ পথ অনুসরণ করবে। তখন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো জাতির চিন্তার স্বাধীনতাই হুমকির মুখে পড়বে।

অধ্যক্ষের এমন সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রবিরোধী, মানবাধিকারবিরোধী এবং শিক্ষার মৌলিক চেতনার পরিপন্থি। তীব্র প্রতিবাদসহ অবিলম্বে এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকতা ও প্রতিবাদ কোনো অপরাধ নয় বরং, এগুলোই একটি সচেতন, মানবিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত।

আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব। তাদের কণ্ঠরোধ মানে জাতির কণ্ঠরোধ। তাই কণ্ঠরোধ নয়, চিন্তার পথ খোলা হোক, মতপ্রকাশের আকাশ উন্মুক্ত হোক।

-লেখকঃ আবু রায়হান, শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ 

সাব্বির

×