
ছবি: জনকণ্ঠ
ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশি পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপ শুধু ব্যবসায়িক নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে। পাট বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি অর্থকরী ফসল নয়, গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি এবং লাখো মানুষের জীবিকার উৎস। ভারতের হঠাৎ এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাটশিল্প, কৃষক ও রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ৮ শতাংশের বেশি কমেছে। ভারতের বাজারে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হলে এই পতন আরও বাড়বে। অনেক কারখানা ইতিমধ্যে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাটচাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, ফলে তাদের উৎপাদনেও অনীহা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়বে।
ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষার যুক্তি দেখালেও, নিষেধাজ্ঞার ধরন ও প্রয়োগ পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ। হঠাৎ করে স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পাটপণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া এবং শুধু একটি সমুদ্রবন্দরে সীমাবদ্ধ রাখা ব্যবসায়িক স্বচ্ছতার পরিপন্থী। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ধারণার সঙ্গে যায় না।
বাংলাদেশের উচিত, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা। কূটনৈতিক পর্যায়ে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আলোচনা করে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের পাটপণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা—এমন বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। সরকারি ক্রয়ে পাটজাত পণ্য বাধ্যতামূলক করার আইন বাস্তবায়নে কঠোরতা আনতে হবে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যবহার বাড়াতে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পাটশিল্পে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার, যাতে নতুন ধরনের পণ্য তৈরি হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়।
এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু প্রতিবাদ বা আপত্তি নয়, প্রয়োজন কৌশলগত প্রস্তুতি। বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে, যাতে কোনো দেশের একতরফা সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের শিল্প ও শ্রমজীবী মানুষের ক্ষতি না হয়। পাটশিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারি নীতিতে স্থিতিশীলতা ও দূরদর্শিতা জরুরি।
সবশেষে বলতেই হয়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যেমন প্রয়োজন, তেমনি দেশের স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেওয়াও জরুরি। পাটশিল্পের সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আরও বড় বিপদের মুখোমুখি হবে। এখন সময়, সংকটকে সুযোগে রূপান্তর করার।
শহীদ