
২০১৮ সালে অবৈধ নির্বাচনের পূর্ণ পরিকল্পনা ও সহায়তায় ছিলেন শেখ হাসিনা। সাবেক সিইসি নুরুল হুদা তার জবানবন্দিতে একথা বলেছেন বলে জানালেন ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। ওই জবানবন্দিতে সাবেক সিইসি বলেছেন, নির্বাচনে গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের অতিউৎসাহী কর্মকর্তারা মাঠ দখলে রাখেন। আর পুলিশের অনুগতরা রাতে ব্যালটে সিল মারেন। নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর। নূরুল হুদা জানান, নির্বাচন পরিচালনায় যে প্রিসাইডিং অফিসাররা ছিলেন, তারাও ছিলেন আওয়ামী লীগের অনুগত।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর অনেক ঘোলা হয় জল। ৫ বছর পর সবার অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের জন্য আলোচনা বৈঠক আর সমঝোতায় কেটেছে দিনের পর দিন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নৌকা ধানের শীষের লড়াই দেখতে মুখিয়ে ছিল জনগণ। কিন্তু নির্বাচনের দিন যতই ঘনীয়ে আসছিল ততই সংখ্যা বাড়ছিল হস্তক্ষেপের পক্ষপাতিত্বের।
বিএনপি সহ অনেক রাজনৈতিক দল সবার সঙ্গে বৈঠক করে দেশের মানুষকে একটি সুষ্ঠু অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল। ৩০ ডিসেম্বর বেশিরভাগ মানুষ জেনে যান রাতেই হয়ে গেছে ভোট। ওই ভোট কেমন হয়েছিল তা উঠে এসেছে তখনকার সিইসি নুরুল হুদার দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে। জানিয়েছেন তৎকালীন ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন অনেক কিছুর মূলে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয় প্রশাসন ক্যাডারের মাধ্যমে। আর জালিয়াতির সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআই এর।
নুরুল হুদা দাবি করেন নির্বাচন কমিশনারদের অন্ধকারে রেখে আগেই সব হয়। ঢাকা মেট্রো উত্তরের পিবিআই অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, ৯০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ভোট পড়েছে যেটা তার জন্য বিব্রতকর হয়েছে। সাংবাদিকরা অনেক জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তিনি বলতে চেয়েছেন যে তাকে অন্ধকারে রেখেই অনেক কিছু করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে অতি উৎসাহী অনেক সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট জড়িত সুবিধাবাদী যারা তারাই এটা করেছে। ইন্টেলিজেন্স থেকে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারি যে বিভিন্ন দপ্তর থেকে যে রিপোর্ট গুলো করা হয়েছে সেগুলোতে ফেয়ার সুন্দর নির্বাচন হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরে উনি জানতে পেরেছেন যে এগুলো আসলে তথ্যগুলো সঠিক দেওয়া হয়নি।
আদালতে জবানবন্দিতে সাবেক এই সিইসি জানান, নির্বাচনের সময় পার হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন অনেক কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ভোটারদের চেয়েও বেশি। অনেক জায়গায় রাতেই হয়ে গেছে ভোট। তিনি উল্লেখ করেন পদত্যাগ করবেন তেমন পরিস্থিতিও ছিল না। সব মিলিয়ে ওই সময় তিনি অনূভব করেন সব শেষ হয়ে গেছে। বিচারকের কাছে এমন নির্বাচনের জন্য অনুতপ্ত বলেও জানান নুরুল হুদা। তার জবানবন্দিতে এসেছে অবৈধ এই নির্বাচনের পূর্ণ পরিকল্পনা ও সহায়তায় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, নিশি রাতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলা হয় নুরুল হুদাকে। ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দেওয়া হয় সে জবানবন্দিটা উনি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আসামি করে মামলা করেন বিএনপির একজন নেতা। মামলায় সাবেক দুই সিইসি এখন কারাগারে।
রিফাত