
ছবি: বান্দরবানের রুমায় সেনা অভিযানে তিনটি এসএমজি, একটি রাইফেল’সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়।
বান্দরবানের রুমার দুর্গম পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের কমান্ডারসহ দুই জন নিহত হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে কেএনএফের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। কেএনএফ আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টার দিকে পাইন্দু ইউনিয়নের পলিপ্রাংসা ও মুয়ালপি পাড়ার মাঝামাঝি ১৬ কিলোমিটার দূরে তাইদং ঝিড়ি এলাকায় নাইতং পাহাড়ের উপর এই ঘটনাটি ঘটে।
নিহত দুইজনের মধ্যে একজনের নাম পুটিং-ডলি, যিনি কেএনএফের নেতৃত্ব পর্যায়ের মেজর পদবির সশস্ত্র সদস্য ছিলেন। নিহত অপরজন কেএনএফ-এর সশস্ত্র শাখার সদস্য ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে তার নাম জানা যায়নি।
শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার পলিপ্রাংসা-মুয়ালপি পাড়া এলাকায় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। এসময় তল্লাশি চলাকালে সেনা সদস্যরা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। অভিযানের টের পেয়ে কেএনএফ সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে, সেনা টহল দল ঘটনাস্থলে ইউনিফর্ম পরিহিত দুইজন সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি সাবমেশিনগান (এসএমজি), ১টি রাইফেল, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, অস্ত্রের ম্যাগাজিন, কেএনএফ-এর ব্যবহৃত ইউনিফর্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
সন্ত্রাসবিরোধী এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৬, ৩৬ ও ৩৭ বীর বেঙ্গলের ইউনিটের নিরাপত্তা টিম। এই তিন বেঙ্গলের সাড়াশি অভিযানে কেএনএফ কমান্ডারসহ দুজন নিহত ও তাদের আস্তানা ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা জোনের মাল্টিপারপাস শেডে কেএনএফের আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত ৩টি এসএমজি অস্ত্র, ১টি রাইফেল, ৮টি ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উপস্থাপন করা হয়। পরে অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন রুমা জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল আলমগীর হোসেন।
এসময় রুমা জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের অভিযান শুধুমাত্র পার্বত্য সশস্ত্র দলের বিরুদ্ধে। যারা স্থানীয় নাগরিক, তাদের প্রতি সেনাবাহিনীর শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি রয়েছে। তাদের জানমাল নিরাপত্তায় রক্ষার্থে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর।
ভবিষ্যতে পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেএনএফ যেখানে অবস্থান করছে, সেটি পর্যটন এলাকায় থেকে অনেক দূরে। তাই পর্যটন শিল্পে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোতে কেএনএফের সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের জন্য বম জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেনাবাহিনীর অব্যাহত সফল অভিযানের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ১২৬টি পরিবার তাদের নিজ নিজ পাড়ায় ফিরে এসেছে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা, আশ্রয় ও পুনর্বাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে।
আফরোজা