
ছবি: প্রতীকী
সকালের শুরুটা কেমন হচ্ছে, সেটিই অনেকাংশে ঠিক করে দেয় আপনার পুরো দিনের ছন্দ। আর দিনের পর দিন সেই সকালগুলোর গড়নই নির্মাণ করে আপনার জীবনের মান, মেজাজ এবং গতিপথ। তাই সকালের অভ্যাসগুলো হতে পারে এমন এক শক্তিশালী হাতিয়ার, যা নিঃশব্দে বদলে দিতে পারে আপনার চিন্তাভাবনা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা।
প্রথম কাজটাই যদি ভুলভাবে শুরু হয়, সারাদিনই তার রেশ টেনে নেয়। আবার যদি দিনের শুরুতেই আপনি নিজেকে সামলে নিতে পারেন, নিজের জন্য কিছু ভালো সময় বরাদ্দ করতে পারেন, তাহলে দিনটাও হয়ে ওঠে গঠনমূলক ও ইতিবাচক। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হলে কিছু সুনির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তোলাই যথেষ্ট।
দিন শুরুর আগেই যদি কিছু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখা যায়, তাহলে সেটি শুধু মানসিক প্রশান্তিই নয়, বরং কর্মদক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও স্থিরতা সব কিছুতেই প্রভাব ফেলে। যারা জীবনে উন্নতি করতে চান, আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চান বা নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে তুলতে চান, তাদের জন্য সকালের এই সময়টুকু একান্তভাবে প্রয়োজন।
ঘুম থেকে উঠে পানি পান করার মতো ছোট একটি কাজই যেমন হজমের উন্নতি ঘটায়, তেমনি দিনের জন্য প্রস্তুত করে শরীরকে। ডিজিটাল স্ক্রিন এড়িয়ে কিছু সময় প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে মনও হয়ে ওঠে হালকা। মোবাইল ফোন হাতে নেওয়ার আগেই যদি আপনি দশ মিনিট চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেওয়া-নেওয়ার দিকে মন দেন, তাহলে দিনটি অনেক শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হবে।
শরীরচর্চা সকালের আরেকটি অমূল্য সম্পদ। সেটা জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানো হোক বা বাসার ছাদে একটু হাঁটা, সকালবেলার নীরবতায় শরীর নড়াচড়া করাতে যে তৃপ্তি মেলে, তা দিনের আর কোনো সময়ে পাওয়া যায় না। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শারীরিক সুস্থতাই আনে না, মনের ওপরেও পড়ে ইতিবাচক প্রভাব।
ধ্যান বা নীরবতায় থাকা এই চর্চাটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। চোখ বন্ধ করে নিজের নিঃশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া, পাঁচ মিনিট পুরোপুরি নিজের ভেতরে ডুবে থাকা, আপনাকে ভাবতে শেখাবে, স্থির থাকতে শেখাবে। জীবনের জটিলতা থেকে অন্তত কিছু সময় নিজেকে আলাদা রাখার এই অভ্যাস আপনাকে করে তুলবে দৃঢ়চেতা ও মেজাজে ভারসাম্যপূর্ণ।
সকালে টু-ডু লিস্ট করা অনেকেই অবহেলা করেন। অথচ দিনের কাজগুলো আগে থেকেই পরিষ্কার থাকলে আপনি সেটি বাস্তবায়নেও সফল হন। সকালবেলা কিছু সময় বসে লিখে ফেলুন আজ কী কী কাজ করতে চান। নিজের অগ্রাধিকার বুঝে সময় ভাগ করে নিলে চাপ কমবে, ভুলও কম হবে।
সবশেষে আসে কৃতজ্ঞতা চর্চার বিষয়টি। অনেকেই এটাকে তুচ্ছ ভাবলেও মনস্তত্ত্ব বলছে প্রতিদিন যে তিনটি জিনিসের জন্য আপনি কৃতজ্ঞ, তা মনে করেই দিন শুরু করলে মন থাকে হালকা ও ইতিবাচক। আপনি বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন, প্রিয়জনেরা পাশে আছে— এই সাধারণ অথচ মূল্যবান অনুভূতিগুলো স্মরণ করলেই দিনটা হয়ে উঠতে পারে অনেক বেশি প্রাণবন্ত।
সকালের এই অভ্যাসগুলো এক দিনে গড়ে ওঠে না। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন একটু একটু করে এগোন, তাহলে এক মাস পর ফিরে তাকালে দেখবেন আপনার মধ্যে কতটা পরিবর্তন এসেছে। সকালে কীভাবে দিন শুরু করছেন, সেটিই আপনার জীবনের মানচিত্র বদলে দিতে পারে। তাই নতুন কিছু শুরু করতে চাইলে, দিন শুরু করুন ঠিকভাবে— নিজের জন্য, নিজের ভবিষ্যতের জন্য।
এম.কে.