ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

সোরিয়াসিস বেড়ে যাওয়ার ৮টি গোপন কারণ, যা আমরা অনেক সময়ই উপেক্ষা করি

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ২ জুলাই ২০২৫

সোরিয়াসিস বেড়ে যাওয়ার ৮টি গোপন কারণ, যা আমরা অনেক সময়ই উপেক্ষা করি

ছবি: সংগৃহীত।

সোরিয়াসিসের উপসর্গ হঠাৎ করেই দেখা দেয় না বরং অনেক সময় কিছু গোপন কারণ চুপিসারে তা বাড়িয়ে তোলে। এসব কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ বিষয় হলেও আমরা সেগুলো প্রায়ই গুরুত্ব দিই না। ফলে বাড়তে থাকে ত্বকের জ্বালা, খুসকি ও লালচে ছোপ। তবে সচেতন থাকলে এসব কারণ চিনে ফেলে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

১. গলা ব্যথা বা সংক্রমণ:
আপনার জানা ছিল কি, সাধারণ গলা ব্যথাও সোরিয়াসিস বাড়াতে পারে?

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৭৫ জন সোরিয়াসিস রোগীর মধ্যে ৪২% জানান গলা ব্যথার পর তাদের ত্বকের অবস্থা খারাপ হয়। এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭২%—যদি গলা ব্যথার কারণ স্ট্রেপ ইনফেকশন হয়। বিশেষ করে নারীরা ও যারা অল্প বয়সে সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

আশ্চর্যের বিষয়, যাদের টনসিল অপসারণ করা হয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেকের সোরিয়াসিসের লক্ষণ কমে গেছে। গবেষকরা মনে করছেন, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে টনসিল অপসারণ উপকারী হতে পারে।

২. অন্ত্রের জীবাণুর ভারসাম্যহীনতা:
আমাদের অন্ত্রে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর বড় প্রভাব ফেলে। এই ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়ে, যার একটি হলো সোরিয়াসিস।

গবেষণায় দেখা গেছে, সোরিয়াসিস আক্রান্তদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়—তীব্রতা যত বেশি, এই ভারসাম্যহীনতা তত বেশি। কখনও বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া যেমন Prevotella বেশি পাওয়া গেছে, কখনও আবার তা কম। এই অবস্থা ‘ডিসবায়োসিস’ নামে পরিচিত।

৩. অতিরিক্ত ঘাম:
ব্যায়াম বা কাজের চাপে ঘাম ঝরলে সেটা অনেক সময় ত্বকে চুলকানি বাড়ায়। সেই চুলকানি সহ্য করতে না পেরে খুঁটলে অনেক সময় ত্বকে ক্ষতও তৈরি হয়, রক্ত বের হয়। এতে ত্বক আরও বেশি ফোলাভাব, জ্বালা ও ব্যথায় ভোগে।

৪. গরম পানি দিয়ে গোসল:
অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসলকে আরামদায়ক মনে করেন, কিন্তু সোরিয়াসিসপ্রবণ ত্বকের জন্য এটি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত গরম পানির কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, হয়ে পড়ে ফাটা ও খুসকিময়।

অনেকের জন্য গোসল শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় নয়, মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমানোর উপায়ও বটে। ফলে তারা দিনে একাধিকবার গোসল করেন, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে।

চিকিৎসকদের মতে, হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসলই সবচেয়ে নিরাপদ। আর উদ্বেগ কমাতে মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ব্যায়াম কিংবা জার্নাল লেখা সাহায্য করতে পারে।

৫. অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার:
আজকাল গবেষকেরা আলাদা করে নজর দিচ্ছেন আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড বা অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে—যেগুলোতে অতিরিক্ত চিনি, চর্বি ও কৃত্রিম উপাদান থাকে। এসব উপাদান দেহে প্রদাহ বাড়ায় এবং সোরিয়াসিসের উপসর্গকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৬. হরমোনের পরিবর্তন ও মেনোপজ:
বিশেষ করে নারীদের মধ্যে হরমোনজনিত পরিবর্তনের সময় সোরিয়াসিস বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এটি ঘটে মূলত বয়ঃসন্ধিকাল বা মেনোপজের সময়।

৭. রোদে পোড়া বা চোট:
চামড়ায় কাটা, চিরে যাওয়া, পোকামাকড়ের কামড় বা সানবার্ন সোরিয়াসিসের নতুন উপসর্গ তৈরি করতে পারে। এই প্রতিক্রিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় Koebner response।

৮. আবহাওয়া ও জলবায়ু:
ঠান্ডা বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, যা সোরিয়াসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ধরনের পরিবেশে বিশেষ যত্ন না নিলে উপসর্গ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গোপন কারণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। কারণ আগেভাগে জানা থাকলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। 

সূত্র: ব্রাইট সাইড।

মিরাজ খান

×