ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

গর্ভাবস্থায় গোপনে একজন নারীর মস্তিষ্কে কী পরিবর্তন ঘটে? 

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২ জুলাই ২০২৫

গর্ভাবস্থায় গোপনে একজন নারীর মস্তিষ্কে কী পরিবর্তন ঘটে? 

ছবি: সংগৃহীত।

গর্ভাবস্থা শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনের সময় নয়, মস্তিষ্কেও ঘটে যায় বিস্ময়কর রূপান্তর—যা অনেকেই বুঝতে পারেন না। গবেষকদের মতে, এ সময় নারীর মস্তিষ্ক নতুনভাবে ‘সংযুক্ত’ হয় যেন সে আরও গভীরভাবে তার সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। যেটিকে সাধারণত ‘বেবি ব্রেইন’ বলে ভুলে যাওয়ার অভ্যাস মনে করা হয়, সেটি আদতে নারীর মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কের এই ‘রিওয়্যারিং’ বা পুনঃসংযুক্তির পেছনে শুধু হরমোন দায়ী নয়। কারণ সন্তান পালনের মানসিকতা কেবল প্রসূতি নারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না—পিতা, দত্তক গ্রহণকারী কিংবা শিশুর দেখভালের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কেও পরিবর্তন আসে।

গবেষক ড. জনি কোল বলেন, “পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের প্রস্তুতি মস্তিষ্কে শুরু হয় অনেক আগেই, যেটা অধিকাংশ মানুষ কল্পনাও করতে পারেন না।”

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. রোনাল্ড ডাল জানিয়েছেন, গর্ভাবস্থার হরমোনগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরিবর্তন করে। এ পরিবর্তন নারীদের শিশুদের সংকেত বুঝতে, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে সংযুক্ত হতে এবং তাদের যত্ন নিতে শেখায়।

এমনকি মস্তিষ্কের সাদা পদার্থ (White Matter)—যা বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করে—গর্ভাবস্থায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। এটি যেন পাথুরে রাস্তা মেরামত করার মতো—ফলে বিভিন্ন অংশ আরও কার্যকরভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, শিশুর প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়াও সহজ হয়।

বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, গর্ভাবস্থার মাত্র ৯ সপ্তাহের মধ্যেই মস্তিষ্কে পরিবর্তন শুরু হয়। প্রায় ৪০০টি মস্তিষ্ক অঞ্চলের মধ্যে ৮০% অঞ্চলে ধূসর পদার্থ (Gray Matter) হ্রাস পায়, বিশেষ করে যে অংশগুলো আবেগ বোঝা ও সামাজিক যোগাযোগের সঙ্গে জড়িত।

অবশ্য এই পরিবর্তন ভয় পাওয়ার বিষয় নয়। আমস্টারডামের ‘প্রেগন্যান্সি অ্যান্ড দ্য ব্রেইন ল্যাব’-এর প্রধান গবেষক ড. এলসেলিন হোকজেমা বলেন, “এই পরিবর্তনগুলো মায়েদের শিশুদের প্রতি আরও প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে।”

তিনি যোগ করেন, মস্তিষ্কের এই অভিযোজন কেবল আবেগগত সংযোগ নয়, বরং চিৎকার, ক্লান্তি, বা জটিল পরিস্থিতিতে মায়ের মানসিক স্থিরতা বজায় রাখার মতো সক্ষমতাও গড়ে তোলে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাদা পদার্থে হওয়া কিছু উন্নতি প্রসবের পর ধীরে ধীরে কমে এলেও ধূসর পদার্থের পরিমাণ হ্রাস বহুদিন স্থায়ী থাকে—অনেক ক্ষেত্রেই দুই বছর পর্যন্ত।

ড. জ্যাকবস এই পরিবর্তনকে আখ্যা দেন “মস্তিষ্কে স্থায়ী ছাপ” হিসেবে, যা মায়েদের আবেগগতভাবে আরও সংবেদনশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে।

গবেষকরা এমনও দাবি করেছেন যে, গর্ভাবস্থার সময় নারীর মস্তিষ্কে এমন সুস্পষ্ট পরিবর্তন হয় যে, একটি কম্পিউটার শুধুমাত্র ব্রেইন স্ক্যান দেখে অনুমান করতে পারে নারী গর্ভবতী কিনা।

‘বেবি ব্রেইন’ বলতে আমরা অনেক সময় নারীদের ভুলে যাওয়া বা মনোযোগ কমে যাওয়াকে বুঝি। তবে গবেষকরা বলছেন, এটি আসলে এক ধরনের মানসিক অভিযোজন—যা একজন নারীকে মায়ের ভূমিকায় মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থা শুধু একটি নতুন জীবনের সূচনাই নয়, এটি নারীর মস্তিষ্কেও এক নতুন রূপান্তরের সময়—যা তাকে আরও সংবেদনশীল, যত্নশীল ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলে। এসব পরিবর্তনকে বুঝতে পারলে মাতৃত্বের পথ চলাও হতে পারে আরও সহজ ও সচেতন।

সূত্র: ব্রাইট সাইড।

মিরাজ খান

×