
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মিনি কক্সবাজারখ্যাত পারকি সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণাংশে ঢেউয়ের তোড়ে বিলীন হচ্ছে ঝাউগাছ এবং বেড়িবাঁধ।
অব্যাহত ভাঙনে বিলীনের মুখে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় প্রাকৃতিক লীলাভূমি পারকি সমুদ্রসৈকত। তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের সারি সারি ঝাউগাছ, সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য আর নির্মল বাতাস একসময় ছিল প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। কিন্তু এখন সেই সৌন্দর্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিনি কক্সবাজারখ্যাত এই সৈকতের দক্ষিণাংশের প্রায় সব ঝাউগাছই সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শিকড় উপড়ে পড়ে গেছে। বাকি কয়েকটি গাছও বেঁকে পড়েছে মৃত্যুপথযাত্রীর মতো।
ভেঙে পড়েছে লুসাই পার্কের সীমানা প্রাচীর, সাগরের পানি ঢুকছে ডোবা হয়ে। স্থানীয়দের তৈরি করা বেড়িবাঁধও বিলীন হয়ে গেছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি চলে যাচ্ছে সাগরের গর্ভে। কোনো বাধা না থাকায় বিশাল ঢেউয়ের তা-ব পৌঁছে যাচ্ছে সৈকতের দোকানপাট ও স্থাপনাগুলোতে।
স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তানের আমলে দুটি পাথরের বাঁধ ছিল, বন্দরের নব্য বাড়ানোর জন্য ফ্রি ড্রেজিংয়ের ফলে আনোয়ারা সাইডে দেওয়ালটি ভেঙে যায়, যার কারণে সাগরে ঢেউ সরাসরি বিচে আঘাত করছে। ২০০০ সালের আগে পারকি বিচে বনায়ন করা হয়েছিল। সেগুলো ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে ১৩ একর জায়গাজুড়ে আবারও বনায়ন করা হয় যা এখন প্রায় বিলুপ্তির দিকে। সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক হাসান ইমরান চৌধুরী বলেন, দিন দিন পারকি বিচের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে। ঢেউয়ের কারণে গাছ, বাঁধ, দোকানপাট সব ভেঙে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
বিচের ব্যবসায়ী লুসাই পার্কের মালিক মো. আকবর জানান, লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি এখানে। আমার পার্কের বাঁধ ভেঙে গেছে। এখানে সরকার ও বেসরকারিভাবে অনেক স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো রক্ষায় শক্ত বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। পারকি বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম জানান, শত শত ব্যবসায়ী এই সৈকতকে কেন্দ্র করে রুজি রুজগার করছেন। ঝাউগাছ ভেঙে পড়ছে, পানির স্রোতে দোকান ভেসে যাচ্ছে।
এই সৈকত আমাদের সম্পদ, এটা রক্ষা করতেই হবে। এ বিষয়ে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন, পারকি বিচ থেকে টানেল পর্যন্ত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো সেটি অনুমোদন পায়নি। স্থানীয়দেরও এই বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।