
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক দিলশানা পারুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৪ আগস্ট রাতের এক আলোচিত পরিকল্পনার অভ্যন্তরীণ বিবরণ তুলে ধরেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “চার অগাস্টের রাতের বেলা পরের দিন গণভবন ঘেরাও এর ঘোষণা হয়ে গেছে। WhatsApp যে গ্রুপগুলোতে আমরা কাজ করতাম, একটা ভয়ংকর থমথমে পরিবেশ প্রত্যেকটা গ্রুপের মধ্যে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এরমধ্যে একটা গ্রুপ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেখানে জুলকারনাইন সায়ের, শাহেদ আলম, তাসনিম খলিল, জিয়া হাসান, ফাহাম ভাই—এরা থেকে শুরু করে আসলে আমরা অনলাইনে পরিচিত মোটামুটি সবাই আছি। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক—পরের দিন আসলে লাশ কত পড়বে!! কারণ তখনও আমরা বুঝতে পারছি না সেনাবাহিনী পাঁচ তারিখে গুলি করবে কি করবে না। ওই গ্রুপে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এক্স ক্যাডেট এবং প্রাক্তন সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।”
গ্রুপের আলোচনার বিষয়ে তিনি লেখেন, “গ্রুপের মধ্যে একজন বলল যে একমাত্র উপায় গতকালকের হত্যার সংখ্যা যতটুকু পারা যায় কমানো, যদি বাংলাদেশ সরকারকে এইটা বুঝানো যায় যে কেউ একজন তাকে মনিটর করছে, সে একদম খুল্লামখুল্লা কেউ দেখছে না—এইভাবে খুন চালাতে পারবেনা। সায়ের ভাই সম্ভবত বলল নাসার স্যাটেলাইট ক্যামেরা একদিনের জন্য ভাড়া নেয়া যায়। এবং ভাড়াও খুব সম্ভবত বেশি না, মাত্র ১০ হাজার ডলার।”
দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, “বাংলাদেশে তখন মাঝরাত। মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো পুরা গ্রুপ একটিভ হয়ে গেল, সাথে সাথে খোঁজ লেগে গেল নাসায় কে চাকরি করে, কাকে দিয়ে রিচ করা যাবে। ওই গ্রুপের মধ্যেই হার্ভার্ডের একজন অ্যালামনাই ছিল। সে বলল হার্ভার্ডের আরেকটা WhatsApp গ্রুপে তারা কাজ করছে, সেখানে নাসার কয়েকজন বাংলাদেশি আছে। সাথে সাথে সেখানে যোগাযোগ শুরু হয়ে গেল। দশ হাজার ডলার—ওইটা ছিল সবচেয়ে তুচ্ছ ঘটনা। কে যেন একজন আধ ঘন্টার মধ্যে মনে হয় টাকাটা ম্যানেজ করে ফেলল।”
তিনি আরও জানান, “কিন্তু হাতে তো তখন সময় বেশি নাই, অলরেডি মাঝরাত। তখনও স্যাটেলাইট ভাড়া কনফার্ম করতে পারেনি। তখন জিয়া ভাই বলল, ভাড়া করুক না করুক, এটা রিউমার বা প্রোপাগান্ডা হলেও আমরা এটা ফেসবুকে ছেড়ে দিই, কিচ্ছু করার নাই, একটা থ্রেট হলেও সামনে থাকুক। সবাই এই প্রস্তাবে রাজি এবং এই মাঝরাতে বসে এই নিউজটা সবাই ভাইরাল করে দিল। ভোর হতে হতে, ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ, গ্রুপের মধ্যে আপডেট আসলো স্যাটেলাইট ভাড়া করা হয়ে গেছে।”
ঘটনাটির ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দিলশানা পারুল বলেন, “অন্য কোন সময় হলে হয়তো মনে হতো, কি সমস্ত এবসার্ড ঘটনাকে আমরা বাস্তবে রূপ দিয়ে ফেলছি। কিন্তু জুলাইয়ে বাংলাদেশে এতসব অসম্ভব ঘটনা ঘটছিল যে, কোন কিছুই তখন আর অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। আমি শুধু বিস্ময় নিয়ে দেখছিলাম, যৌথভাবে কি অসাধ্য সাধনই না আমরা করেছি!”
ফারুক