ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১ জুলাই ২০২৫

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

শুরু হয়েছে রক্তঝরা জুলাই

শুরু হয়েছে রক্তঝরা জুলাই। যে জুলাই এ দেশের ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় রক্তের বিনিময়ে হলেও বৈষম্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। আজ ২ জুলাই। ২০২৪ সালের এই দিনে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে ফের আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

শিক্ষার্থীদের একটিই দাবি ছিল ‘কোটা প্রথা’ বাতিল চায় তারা। এদিন পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বিকেলে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেন শিক্ষার্থীরা। এতে বলা হয়, ৩ ও ৪ জুলাই দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। 

এর আগে ১ জুলাই কোটা বাতিল করতে ঢাবি গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় চার দফা দাবিসহ টানা তিনদিনের অবস্থান কর্মসূচি দেন তারা। দাবিগুলো ছিল-২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া। এছাড়া সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া ও দুর্নীতিমুক্ত-নিরপেক্ষ-মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

এদিকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে বরং আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীরা। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খোঁজ নেওয়া শুরু করে বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। যারা যারা আন্দোলনে যাচ্ছে তাদেরকে পরবর্তীতে না যাওয়ার হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। 
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, আন্দোলনে না যেতে হলে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয় ঢাকা কলেজেও। সেদিনের কথা স্মরণ করে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। মধ্যরাতে হলের ছাত্রলীগের সিনিয়র ভাইরা এসে আমাদেরকে কালকে কোনো বিক্ষোভ মিছিল বা কোটাবিরোধী আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য বলেন। ওই সময় ওয়াসিম নামে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, যদি আন্দোলনে যাস তাহলে তোদের খবর আছে, সঙ্গে সঙ্গে হল থেকেও বের করে দেব। তারা বলেন, শুধু আমাদের রুমে না হলের বাকি রুমগুলোতে গিয়েও শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি দেয় তারা।
কোটা নিয়ে আগে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো। তবে এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভও করেন কোটাবিরোধীরা।

×